বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খুন নয়, হাতিরঝিলে ডিবিসি কর্মীর ‘আত্মহত্যা’

  •    
  • ১৫ জুলাই, ২০২২ ২০:২১

গত ৭ জুন সন্ধ্যায় মহাখালীর মেস থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি বারী। পরদিন ভোরে হাতিরঝিলে পুলিশ প্লাজার পাশে লেক থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশ থেকে রক্তমাখা ছুরি, মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। তার গলা ও বুকে ছুরির আঘাতের চিহ্ন ছিল।

হাতিরঝিলে বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের প্রডাকশন বিভাগের কর্মী আব্দুল বারীর মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ।

এক মাসেরও বেশি সময় আগে বুক ও গলায় ক্ষত নিয়ে লেকে মরদেহটি পাওয়া গেছে। পাঁচ সপ্তাহের তদন্ত শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, আব্দুল বারীর মৃত্যুর কারণ তিনি নিজেই। মহাখালীর একটি দোকান থেকে ছুরি কিনে হাতিরঝিলে এসে নিজেই নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করেন বারী।

তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, ডিবিসির এই কর্মী শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ। সহকর্মী, স্বজনদের সঙ্গেও কথাবার্তা বলা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ঢাকায় যে মেসে থাকতেন, সেখানেও অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হতো কমই।

বারীর কর্মস্থল ডিবিসি টিভির প্রডাকশন বিভাগের প্রধান পুলিশের এই বর্ণনাকে অস্বাভাবিক বলছেন না। তিনি বলছেন, বারী কয়েক মাস ধরেই একা একা থাকতেন। সহকর্মীদের সঙ্গেও সেভাবে কথা বলতেন না।

গত ৭ জুন সন্ধ্যায় মহাখালীর মেস থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি বারী। পরদিন ভোরে হাতিরঝিলে পুলিশ প্লাজার পাশে লেক থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মরদেহের পাশ থেকে রক্তমাখা ছুরি, মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। তার গলা ও বুকে ছুরির আঘাতের চিহ্ন ছিল।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এমন কিছু পাই নাই যে, কোনো মানুষ শত্রুতাবশত তাকে অনুসরণ করে।

‘ঘটনাস্থলে কোনো সিসিটিভি ছিল না। তার বাসা থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব আড়াই কিলোমিটারের মতো। এই এলাকার শত শত সিসিটিভি ফুটেজ আমরা চেক করেছি। যারা প্রফেশনাল আকাজ-কুকাজ করে ডিজিটালি-অ্যানালগি অনুসরণ করেছি। আমরা তাদের ও রকম ইনভলভমেন্ট পাই নাই।’

আপনারা কি মনে করছেন বারী নিজেই নিজেকে ছুরিকাঘাত করেছেন?- এই প্রশ্নে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সেটাই মনে করি।’

কেন বারী আত্মহত্যা করতে যাবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তিনি ব্যক্তিগত জীবনে হতাশ ছিলেন। পরিবারের লোকদের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। যে মেসে ছিলেন, ওই মেসের লোকদের সঙ্গেও মেলামেশা করতেন না। জুলাই মাসে তিনি বাসা ছেড়ে দেবেন, চাকরিও ছেড়ে দেবেন। ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন।’

এই সিদ্ধান্তে হুট করে আসা হয়নি বলেও জানান মশিউর রহমান। বলেন, ‘মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, থানা পুলিশ, র‍্যাব, পিবিআই, সিআইডি সবাই তদন্ত করেছি। আমরা সবাই সবার সঙ্গে তথ্য-উপাত্ত শেয়ার করেছি। তদন্তে পেয়েছি, আব্দুল বারী একাধিক দোকানে ছুরির সন্ধান করেছেন। মহাখালীর একটি দোকান থেকে তিনি ছুরি কেনেন। ওই একই ছুরি সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ ঘটনাস্থলে শনাক্ত করে।’

তদন্তের বর্ণনা অনুযায়ী, বারী ছুরি কিনে প্রথমে যান গুলশানের গাউসুল আজম জামে মসজিদে। সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে পরে আসেন হাতিরঝিলের দিকে।

বারীর কর্মস্থল ডিবিসি নিউজের প্রডাকশন ইনচার্জ সাফায়েত হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কলিগ হিসেবে তিনি খুবই ইন্ট্রোভার্ট ছিলেন। আগে মোহনা টিভিতে ছিলেন। ডিসেম্বরের ১ তারিখে আমার টিমে জয়েন করে।

‘কাজের বাইরে ছয় মাসে আমার সঙ্গে ছয়বারও কথা হয়েছে কি না সন্দেহ। প্রচণ্ড রকমের চুপচাপ ছিলেন। তখন তো এভাবে চিন্তা করিনি। তখন ভাবছি যে এমনিতেই হয়তো চুপচাপ থাকে। আমাদের যেহেতু নিউজ চ্যানেল, কাজের অনেক প্রেশার থাকে।’

তিনি বলেন, ‘দুই-তিনটা কথা বললে একটার উত্তর দিত। আমার প্রডাকশন বিভাগেও কারও সঙ্গে কোনো ঘনিষ্ঠতা ছিল না। ছয় মাসে আমার কোনো কলিগের সঙ্গে নিচে নেমে চা খেয়েছে কি না আমার চোখে ধরা পড়ে নাই।’

বারীর শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে কতটা জানেন- জানতে চাইলে ডিবিসি নিউজের এই কর্মী বলেন, ‘রোজার মাসে বলেছিল, ওর চোখের অপারেশন হয়েছে। তখন বলেছিল, ভাই আমি বেশিক্ষণ মনিটরে বসলে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। কিছুক্ষণ পরপর উঠে চোখে পানি দিত। বলত, চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। শারীরিক সমস্যা এটুকুই জানি।

‘তিনি চাকরিও ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। আমি বলেছি, কাজ চালিয়ে যেতে। ভাবলাম একটা ছেলে বেকার হয়ে যাবে, তার চেয়ে থাকুক। তাকে আমরা কাজও কম দিতাম।’

পুলিশ জানিয়েছে বারী নিজেই ছুরি কিনেছিলেন- এ বিষয়ে কিছু জানেন কি না- এই প্রশ্নে সাফায়াত বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা আমাদেরও ডিবি থেকে ইনফর্ম করেছে। ভিডিও ক্লিপও আমাদের দেখিয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর