ময়মনসিংহের তারাকান্দার মাজারের ফকির খেতা শাহের সঙ্গে চলে যাওয়া গৃহবধূকে উদ্ধার করে তার স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। তবে সেই ফকিরের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি এখনও।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক ৬ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক তাইজুল ইসলাম সোহানের নির্দেশে সেই নারীকে তার স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পরিদর্শক প্রসূন কান্তি দাস।
তিনি বলেন, ‘বিকেলে ওই নারীর জবানবন্দির জন্য আদালতে তোলে তারাকান্দা থানা পুলিশ। ঘটনার তেমন কোনো বর্ণনা দিতে পারেননি তিনি।’
সোমবার রাত ১২টার দিকে গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে সেই নারীকে উদ্ধার করা হয়।
তারাকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মালেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই নারীকে উদ্ধার করে মঙ্গলবার দুপুরে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর আদালতে তুলে বিচারকের নির্দেশে স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি।
‘তবে, ওই নারী এতদিন কোথায় কীভাবে ছিলেন, ঠিকঠাক কিছুই বলতে পারেননি। এ জন্য দ্রুত খেতা শাহকে গ্রেপ্তার করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
স্ত্রী ফিরে পেয়েও খেতা শাহ গ্রেপ্তার না হওয়ায় পুরোপুরি খুশি নন তার ভক্ত। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সাজানো গোছানো সংসারটা লন্ডভন্ড করেছে খেতা শাহ। তাকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারব।’
ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় কাঁথাকে বলা হয় খেতা। জেলার তারাকান্দার টিকুরী এলাকায় সব সময় ছেঁড়া কাঁথা শরীরে জড়িয়ে রাখতেন খেতা শাহ নামের এক ব্যক্তি। তিনি যা বলতেন তাই হতো- এমন বিশ্বাসে অনেক লোক তার ভক্ত হয়ে যান৷
বৃদ্ধ বয়সে মারা যান সেই ব্যক্তি। কিন্তু থেকে যান ভক্তরা। একপর্যায়ে নির্মাণ করা হয় মাজার। নামকরণ করা হয় ‘খেতা ছিঁড়ার মাজার’। প্রতি বছর পালন করা হয় ওরস।
এবারও চার মাস আগে ওরস শুরু হয় ওই মাজারে। বরাবরের মতো এবারও হাজারো ভক্তসহ লোকজন আসেন মনের বাসনা পূরণ করার আশায়।
পাগলবেশে ফজলুল হক তালুকদার নামের একজন আসেন মাজারটিতে। ৬০ বছর বয়সী ফজলুলের বাড়ি নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার পাইলাটি গ্রামে।
বড় দাড়ি, লম্বা গোঁফ ও ছেঁড়া কাঁথা গায়ে জড়িয়ে সারাক্ষণ মাজারে বসে সময় কাটাতেন। কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে মাজারের নামের সঙ্গে নাম মিলিয়ে নিজেকে ‘খেতা শাহ’ হিসেবে পরিচয় দেন৷
আধ্যাত্মিক ফকির হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি পেতে কথাও বলতেন খুব কম। এভাবে গ্রামের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন তিনি।
তাকে বাবা ডেকে অনেকে মনের বাসনা পূরণ করতে দোয়া চেয়ে নিতেন। যারা তার কাছে আসতেন, তাদের অনেককে মাথায় হাত ভুলিয়ে ঝাড়ফুঁক দিতেন। এভাবে কয়েক দিনেই তার ভক্তের সংখ্যা বেড়ে যায়।
আধ্যাত্মিক ফকির ভেবে খেতা শাহের ভক্ত হয়ে যান স্থানীয় ওই ব্যক্তি। সংসারের উন্নতি আর মনের বাসনা পূরণ হবে- এমন ধারণা থেকে দুই চাচার পরামর্শে নিয়ে আসেন বাড়িতে।
খেতা শাহকে বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় দেন তিনি। সেখানে রেখেই আপ্যায়ন শুরু করেন। স্ত্রীকেও বলতেন ঠিকঠাক সেবা করতে।
এরপর তার স্ত্রীকে নিয়েই উধাও হন খেতা শাহ।
গত ২২ জুন দুপুর ১২টার দিকে বাবার বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় যাওয়ার কথা বলে সেই নারী খেতা শাহকে নিয়ে বের হন। এরপর দুজনই নিখোঁজ হন।
এ ঘটনায় খেতা শাহের নামে ২৪ জুন সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ওই ভক্ত। রাত ১২টার দিকে তার অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিবদ্ধ করা হয়।