প্রেমের টানে সাত সাগর, তেরো নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন তরুণী লিডিয়া লুজা। তিনি মজেছেন গাজীপুরের যুবক ইমরান খানের প্রেমে।
দুজনের পরিচয় ফেসবুকে, পরে প্রণয়।
সোমবার ভোর ৩টায় হযরত শাহজালাল অন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান লিডিয়া। তাকে স্বাগত জানিয়ে বাড়িতে তোলেন ইমরান।
ভিনদেশি তরুণীর আগমণে ওই এলাকায় তৈরি হয়েছে ভিন্ন আমেজ।
লিডিয়া লুজা খান আমেরিকার অ্যারিজোনা স্টেটের বাসিন্দা। বাবা নেই, মা অন্যত্র বিয়ে করেছেন। দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই দাদার সঙ্গে বড় হয়েছেন লিডিয়া লুজা। নিজ দেশে একটি বিমানবন্দরে চাকরি করতেন।
ইমরান খান গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের কুমারভিটা গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। মাদ্রাসা থেকে আলিম ও দাখিল পাস করে বর্তমানে পড়াশোনা করছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষে।
বিকেলে ইমরানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এই দম্পতিকে দেখতে পাড়া-প্রতিবেশীসহ আশপাশের এলাকার লোকজন ভিড় করছেন।
লিডিয়া জানান, ফেসবুকে আলাপচারিতার একপর্যায়ে ইমরানকে তার ভালো লেগে যায়। পরে তিনিই প্রেমের ও বিয়ের প্রস্তাব দেন। দুই পরিবারের সম্মতিতে খ্রিষ্ট ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি আরও জানান, বাংলা না জানার কারণে সবার সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে কিছুটা সমস্যা হলেও অন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে না বাংলাদেশে।
যুক্তরাষ্ট্রের তরুণীর মূল্যায়ন, বাংলাদেশের মানুষ সৎ ও সহজ-সরল। আমেরিকা ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অন্য সব ক্ষেত্রে মিল রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত সময়ে গাজীপুরের বরমী বাজার ও আশপাশের প্রকৃতি ঘুরে দেখেছেন লিডিয়া। তার কাছে বাংলাদেশ অনেক ভালো লেগেছে।
তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে এখানকার গরমটা খুব ভোগাচ্ছে তাকে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে আমেরিকা যাবেন। তার শাশুড়ি এখন কিছুটা অসুস্থ। তিনি সুস্থ হলে ইমরানকে নিয়ে আমেরিকায় চলে যাবেন।
লিডিয়াকে নিয়ে নিজ গ্রামের রাস্তায় ইমরান
ইমরান খান জানান, ২৮ জানুয়ারি ফেসবুকে একটি আইডি থেকে রিকোয়েস্ট আসে। সেই সূত্রে তাদের পরিচয় হয়। মাসখানেক পর লিডিয়া তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
ইমরান বলেন, ‘প্রথমে আমি তার প্রস্তাব বিশ্বাস করতে পারিনি। ভেবেছিলাম হয়তো কোনো ফেইক আইডি হবে। পরে ভিডিও কলে লিডিয়াকে দেখে বিশ্বাস হয়।’
গত মার্চে তুরস্ক হয়ে লিডিয়া বাংলাদেশে আসেন। তবে বিমানবন্দর থেকে বাইরে যেতে পারেননি। তার ধারণা ছিল ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশে আসতে পারবেন। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
ইমরান বলেন, ‘উভয় পরিবারের সিদ্ধান্তে আমরা নেপালে সাক্ষাৎ করি। আমার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ভাগনি জামাই নেপালে যায়। নেপালের একটি মসজিদে লিডিয়া লুজা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করেন।
‘তবে বিয়েতে লিডিয়ার সঙ্গে কেউ ছিল না। বিয়ের পর সেখানে কয়েক দিন অবকাশ কাটিয়ে যার যার দেশে ফিরে যাই। পরে বাংলাদেশের ভিসার জন্য আবেদন করেন লিডিয়া।’
প্রতিবেশী বাবুল মিয়া জানান, ‘অনেকেই এই দম্পতিকে দেখতে ইমরানের বাড়িতে আসছেন। আমেরিকার মেয়ে বলে কথা, তাও আবার বাংলাদেশি যুবকের প্রেমের টানে একেবারে বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। বিষয়টি এলাকার মানুষের মনে ভিন্ন আনন্দের জোগান দিয়েছে।’
ভিনদেশি পুত্রবধূকে সানন্দে গ্রহণ করে নিয়েছেন ইমরানের মা আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি খুশি। ছেলে-পুত্রবধূর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।’
তিনি বলেন, ‘বাসায় এসেই লিডিয়া আমাকে মা বলে জড়িয়ে ধরেছে। আমি তাকে বিরিয়ানি, নুডলস ও ফল খেতে দিয়েছি।’
ভাষাগত কিছু সমস্যা থাকলেও পুত্রবধূ সবকিছুই মানিয়ে নিচ্ছেন, পরছেন বাঙালি পোশাকও। সবাইকে খুব সহজে আপন করে নিয়েছেন লিডিয়া।