বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সারা দেশে বাড়লেও সিলেট বিভাগে কোরবানি কমেছে ১ লাখ

  •    
  • ১১ জুলাই, ২০২২ ২০:০২

সারা দেশে এবার কোরবানি বেড়েছে সাড়ে ৮ লাখ। তবে সিলেট বিভাগে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। আগের বছর এই বিভাগে পশু হয়েছিল ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪১টি। এবার হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫৮৩টি। অর্থাৎ কমেছে প্রায় ৯৭ হাজার।

গত দুই বছর কোরবানি দিলেও এবার পারলেন না সিলেটের সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের মানসীনগরের কৃষক রুস্তম আলী।

তিনি বলেন, ‘কয়েক দফা বন্যায় একেবারে কোমর ভেঙে গেছে। প্রথম বন্যায় মাঠের ধান নষ্ট হয়। পরেরবার ঘরে রাখা ধানও ভাসিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া ঘরবাড়ি আসবাবপত্র সব নষ্ট হয়েছে।

‘ঘর থেকে পানি নামলেও এখনও বাড়ির চারপাশে পানি। এইবার পানির সঙ্গে যুদ্ধ করেই দিন কাটছে। ফলে এবার আর কোরবানি দেয়া হয়নি।’

রোববার ঈদুল আজহা পালিত হয়েছে দেশে। এই ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ পশু কোরবানি। ধর্মীয় বিধান পালনের পাশাপাশি পশু কোরবানিকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও দেখা দেয় চাঙাভাব।

করোনার অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে সারা বিশ্বের মতো দেশেও অর্থনীতি যখন চাপে, নিত্যপণ্যের দর বৃদ্ধিজনিত কারণে জীবন যখন কঠিন হচ্ছে, সে সময় দেশের উত্তর-পূর্বে সিলেট অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কঠিন পরিস্থিতিতেও দেশে পশু কোরবানি বেড়েছে ১০ শতাংশের মতো।

সরকারি হিসাবে এবার সারা দেশে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু কোরবানি হয়েছে। আগের বছর সংখ্যাটি ছিল ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি। এই হিসাবে সংখ্যাটি বেড়েছে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫২১ বেশি।

দেশের সবগুলো হাট এবং অনলাইনে এই পরিমাণ পশু বিক্রি হয়েছে। এই হিসাবে অনলাইনে যেসব পশু বিক্রি হয়েছে, সেগুলোও ধরা আছে।

তবে হাটে না নিয়ে খামারির বাড়ি থেকে বা সড়ক থেকে যে পশু বিক্রি হয়েছে, সেগুলো এই হিসাবের বাইরে। সে হিসাবে প্রকৃত কোরবানি এর চেয়ে বেশি।

তবে কোরবানি বাড়ার এই পরিসংখ্যান সিলেটের ক্ষেত্রে উল্টো। সিলেট জেলার পাশাপাশি গোটা বিভাগেই এবার কম পশু জবাই হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগে এবার মোট পশু জবাই হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫৮৩টি। এর মধ্যে ২ লাখ ১ হাজার ১৮৬টি গরু-মহিষ আর ১ লাখ ৯১ হাজার ৩৯৭টি ছাগল-ভেড়া।

আগের বছর বিভাগে পশু জবাই হয়েছিল ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪১টি। অর্থাৎ এবার কোরবানি কমেছে প্রায় ৯৭ হাজার।

এই কোরবানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে সিলেট জেলায়। এখানে ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৫৪টি, মৌলভীবাজারে ৯৮ হাজার ৪০২, হবিগঞ্জে ৪৫ হাজার ২৬০টি এবং সবচেয়ে কম কোরবানি হয়েছে সুনামগঞ্জে ৩০ হাজার ২০৫টি।

রুস্তম যে কারণে কোরবানি দিতে পারেননি, একই কারণে প্রায় এক লাখ মানুষ এবার তা পারেননি।

গত ১৫ জুন থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দেয়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় দুই জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়েন ৬০ লাখ মানুষ। পানিতে ৮০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শহর এলাকা থেকে পানি কমলেও এখনও প্লাবিত এই দুই জেলার গ্রামাঞ্চল। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের কয়েকটি এলাকায়ও দেখা দেয় বন্যা।

গত মে মাসেও সিলেট ও সুনামগঞ্জ এক দফা পানির নিচে চলে যায়। আর এপ্রিলে বন্যা হয় এই দুই জেলার হাওরাঞ্চলে। দফায় দফায় বন্যায় আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষ।

বন্যার কারণেই এবার কোরবানি কমেছে- এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেনের। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বন্যার কারণে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা এবার ভালো না। এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ এলাকা থেকে পানি নামেনি। ফলে অনেকে এবার কোরবানি দিতে পারেনি।

‘আবার বন্যার কারণে অনেক এলাকায় পশুর হাটও বসানো যায়নি। আবার গ্রামাঞ্চলের পশু শহরে আসতে পারেনি। সবকিছুর কারণেই কোরবানি কমেছে।’

ঈদের দুদিন আগে নগরের মাছিমপুরে কয়েদির মাঠে গরু কিনতে যান মাসুকি আমিন। তিনি বলেন, ‘এবার নগরের হাটগুলোতে গরু চাহিদার তুলনায় অনেক কম ছিল। অন্যান্য বছর তো ঈদের আগে কয়েক দিন রাস্তাঘাটেও গরুর হাট বসে যেত। কিন্তু এবার তেমটি দেখা যায়নি।

‘আমি সিলেট থেকে গরু কিনতে না পেরে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর বাজার থেকে গরু কিনে আনি।’

বন্যার কারণে গ্রামাঞ্চলের গরু না আসায় সিলেট শহরে গরুর সংকট দেখা দেয় বলে জানান তিনি।

বাজারে গিয়ে চাহিদা মাফিক পশু পাননি মাসুক, আর গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীনগরের কৃষক জুবের আহমদ উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় বিক্রি করতে পারেননি নিজের ষাঁড়।

জুবের বলেন, ‘তিন দিন হাটে নিয়েও ষাঁড়টি বিক্রি করতে পারিনি। আমি ৭০ হাজার টাকা দাম চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউ এই দামে কিনতে চায়নি।’

এ বিভাগের আরো খবর