কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদে ঘরমুখো মানুষের শেষ মুহূর্তের যাত্রায় ভোগান্তির শেষ নেই। উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোর শিডিউল বিপর্যয় ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। এমন যাত্রা বিড়ম্বনায় পড়ে গরম আর দীর্ঘ অপেক্ষায় ক্লান্ত ও বিরক্ত কমলাপুর রেলস্টেশনে আসা উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোতের যাত্রীরা।
শনিবার সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার রাত থেকেই অনেক ট্রেনে যাত্রীরা নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ট্রেনের অপেক্ষা করছেন। অনেক যাত্রী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।
যাত্রীরা বলছেন, একে তো ভোগান্তির শেষ নেই, তার ওপরে বাড়ি ফিরতে কখন রওনা হতে পারবেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো সময়ও জানাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের দ্বিগুণ বিড়ম্বনায় পড়ে অনেকের প্রশ্ন, ঈদ বাড়িতে গিয়ে করতে পারব তো?
কমলাপুর রেলস্টেশনে ছোট্ট শিশুদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন তাদের বাবা-মায়েরা। তার ওপরে গরমে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ক্লান্তও তারা। কেউ স্টেশনেই চাদর কিংবা কাগজ বিছিয়ে শুয়ে পড়েছেন।
পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি শুক্রবার রাত পৌনে ১১টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ছাড়েনি।
আব্দুস সাত্তার পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের যাত্রী। যাবেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী হাটে। তিনি সরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সাড়ে ১০টায় এসেছি। এখন শনিবার সাড়ে ৮টা বাজে। একটি রাত পার হয়ে গেল, কিন্তু ট্রেনের দেখা নেই।’
সাত্তার বলেন, ‘আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। রাতে জানানো হলো যে ভোর ৫টায় ট্রেন আসবে। কিন্তু পরে আবারও জানানো হলো সকাল ৯টায় আসবে। এখন পর্যন্ত ট্রেনের দেখা নেই। জানতে পেরেছি যাত্রী ওভারলোডিং এর কারণে ট্রেনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে ট্রেনটির দেরি ১২ ঘণ্টার ওপরে।’
এবার ঈদে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের শৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে আনসাররা অবৈধভাবে যাত্রীদের ওঠার সুযোগ করে দিচ্ছে। যার প্রমাণও রয়েছে।’
শুক্রবার রাত থেকে মানুষ অনেক কষ্ট করে অপেক্ষা করেছিল। ট্রেনটি এত দেরি করায় অনেকে বাড়ি চলে গেছে বলে জানান তিনি।
জসীমউদ্দীন ও তার স্ত্রী মিলা যাবেন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ। মিলা জানান, তারা পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে যাবেন। ট্রেনটি ভোর ৫টার দিকে ছাড়ার কথা ছিল। তবে ছাড়েনি। এরপর বলা হয়েছে ৯টা ১০ মিনিটে ছাড়বে। পরে সময় দেয়া হয় ১০টা ১৫ মিনিট।
জসীমউদ্দীন বলেন, ‘বাড়ি গিয়ে আর ঈদ করতে পারব না। তাও বাড়ি যাচ্ছি। ঈদের খুশিতে সবার সঙ্গে দেখাতে হবে।’
কমলাপুর রেলস্টেশনের পরিবহন কর্মকর্তা আমিনুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ট্রেনটি অনেক বিলম্ব হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে ট্রেনটি দ্রুত ছাড়া যায় সেই ব্যবস্থা করার।’
মেরিনা আক্তার ১০ মাসের শিশুকে নিয়ে আসেন কমলাপুরে। অপেক্ষার একটা পর্যায়ে তিনি প্ল্যাটফর্মে চাদর বিছিয়ে তার শিশুকে ঘুম পাড়িয়েছেন।
নিউজবাংলাকে জানান, তারা যাবেন জয়পুরহাট। তার গন্তব্যে যাওয়ার ট্রেনটির নাম নীলসাগর এক্সপ্রেস। যেটি শনিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও এখন জানানো হয়েছে যে ট্রেনটি দুপুর ৩টা ১০ মিনিটে কমলাপুর ছাড়বে।
মেরিনা বলেন, ‘শনিবার ভোর সাড়ে ৫টায় স্টেশনে এসেছি। আমার ছোট বাচ্চা, দেখতেই তো পাচ্ছেন কি অবস্থায় আছি।’
রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬টার দিকে দিকে ছাড়ার কথা থাকলেও দুই ঘণ্টা দেরিতে সকাল ৮টায় কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যায়।
ট্রেনে রাজশাহী যাবেন আরিফুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ট্রেন কখন ছাড়বে তা বলাই হচ্ছিল না। ২ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়লেও শেষ মুহূর্তে বাড়ি যেতে পারছি বলে ভালো লাগছে।’
পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস শুক্রবার রাত ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যায় শনিবার সকাল ৭টায়।
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটির কয়েকবার সময় পরিবর্তন করা হয়। সকাল সোয়া ৮টায় কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়া কথা থাকলেও স্টেশনের নির্ধারিত সূচি অনুসারে দেখানো হচ্ছে ট্রেনটি সাড়ে ১০টায় ছেড়ে যাবে।
তবে পরে আবার ঘোষণা করা হয় ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়ে যাবে বেলা ১১টায়।