ঈদে স্বজনের কাছে যাওয়া একজন মানুষের অধিকার জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, বাইকে ঘরমুখো মানুষকে সেভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে না।
শুক্রবার দুপুরের আগে জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
এবার ঈদযাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে পুলিশ বাইকের যাত্রা একেবারে বন্ধ না রেখে বাড়ি ফেরার সুযোগ রাখে। যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে ফরম পূরণ করলে পাসের ব্যবস্থা করছে বাহিনীটি। তবে পাস ছাড়াও কিছু কিছু বাইক মহাসড়কে চলছে। পুলিশ তাদের সেভাবে বাধা দিচ্ছে-এমনটা দেখা যায়নি। পদ্মা সেতু ছাড়া বিভিন্ন সেতুকে টোল দিয়ে বাইক চলছে-এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বিআরটিএর নির্দেশনায় বলা হয়েছে জরুরি প্রয়োজনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলতে পারবে। আমরা এ জন্য যৌক্তিক কারণ দেখে মোটরসাইকেলের জন্য পাস দিয়ে দিচ্ছি।
‘কারণ, অনেক মানুষ আছেন যার পরিবার বাড়িতে, তিনি একা ঢাকায় আছেন৷ এখন একা মানুষ ঢাকায় থেকে খাবেন কী? তিনি আবার বাস-ট্রেনের টিকিটও পাননি তাহলে বাড়ি যাবেন কী করে?’
ঢাকার পুলিশ প্রধান বলেন, ‘একজন মানুষ ঈদে তার পরিবারের কাছে যাবে এটা তার অধিকার। আমরা এতে বাধা দিতে পারি না। তাই আমরা কারণ বিবেচনায় কিছু শর্তসাপেক্ষে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি। আর এই যাত্রাপথে তারা যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, তাই পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধের আদেশ কেন, তার কারণ জানান ডিএমপি কমিশনার। বলেন, 'বিআরটিএ বলেন, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় বা পুলিশ বলেন, কাউকে আটকে রাখা বা ঈদযাত্রা ব্যাহত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বাস্তবতা হলো বৃষ্টিতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে থাকে, পদ্মা সেতু চালুর পর ওই রুটে নতুন নতুন বাস নামছে, ওইসব বাসের চালকরা ওই সড়কে নতুন, তার ওপর ঈদের সময় বাস-ট্রাক রাস্তায় খুবই বিশৃঙ্খলা করে। এমন অবস্থায় পরিবার নিয়ে মোটরসাইকেলে দূরের পথ পাড়ি দেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এইসব বিষয় বিবেচনায় দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।’
বৃস্পতিবার রাত থেকে মানুষের ঢল ও টোল প্লাজায় ধীরগতির কারণে রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথে যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার। বলেন, ‘রাত থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত একটা হ্যাসাল গিয়েছে। রাজধানী থেকে বের হবার মুখে মারাত্মক চাপ তৈরি হয়েছিল। একসঙ্গে অনেক মানুষ রওনা দেয়া, তার সঙ্গে টোল প্লাজাগুলোতে টোল আদায়ে ধীর গতির কারণে এমনটা হয়েছে।
‘মহানগর পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ সমন্বয় করে কাজ করছে। পুলিশ হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে গাড়িচালকদের বলছে তারা যেন টোলের সমপরিমাণ ভাংতি টাকা হাতে রাখেন। কারণ, টোল পরিশোধে বড় নোট দিলে এর ভাংতি টাকা ফেরত দিতে গিয়ে বাড়তি সময় লাগে।’
রাজধানীর নিরাপত্তায় সন্তোষ
অন্য এক প্রশ্নে ঢাকার পুলিশ কমিশনার দাবি করেন, রাজধানীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো। তিনি বলেন, ‘আবাসিক এলাকার নিরাপত্তায় আলাদা করে পুলিশ টিম দেয়া আছে। প্রতিটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে টহল পুলিশ কথা বলে তাদের সতর্ক করবে।
বাড়ি যাওয়ার আগে মূল্যবান দ্রব্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরামর্শও দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। বলেন, ‘ঈদে মূলত রাজধানীবাসী তাদের ফ্ল্যাট বাসা-বাড়ি খালি রেখে গ্রামে চলে যান। আমরা অনুরোধ করব নিজেদের স্বর্ণলংকারসহ মূল্যবান জিনিস, নগদ অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যান। প্রয়োজনে ব্যাংকের লকারে রেখে যান।’
আবাসিক এলাকা ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় আলাদা ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান পুলিশ কমিশনার। বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে আমরা আলাদা মিটিং করেছি ব্যাংক ও স্বর্ণের দোকান ও মার্কেটের নিরাপত্তা নিয়ে। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, ব্যাংক ও স্বর্ণের মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীদের যোগসাজশেই অঘটন ঘটে। তাই ব্যাংক ও স্বর্ণের দোকান ও মার্কেটের সকল নিরাপত্তাকর্মীর ডাটাবেইজ পুলিশের কাছে সংরক্ষণ করা আছে।’
পশুর হাটের নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘কোরবানির ঈদে আমাদের চ্যালেঞ্জ থাকে গরুর হাট ব্যবস্থাপনা এবং মানুষ যেন নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। এখন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি ভালো আছে, হাটগুলোতে কোনো ধরনের ছিনতাই, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে কারও নিঃস্ব হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি।
'আজকে (শুক্রবার) থেকে মানুষ মূলত কোরবানির পশু কেনা শুরু করবে, এ জন্য বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাটে ভিড় বাড়ছে। হাটগুলোতে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ অবিরাম কাজ করছে। হাটগুলোতে যেন অতিরিক্ত হাসিল আদায় না করা হয় সে জন্য সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি পুলিশেরও নজরদারি আছে।’
হাটে জাল টাকার ছড়ানো ঠেকাতে তৎপর থাকার কথাও জানান ডিএমপি প্রধান। বলেন, ‘৪ জনকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় প্রতিটি হাটের ডিএমপির কন্ট্রোল রুমে জাল টাকা শনাক্ত করার মেশিনসহ হাটে মানি স্কটিংয়ের ব্যবস্থা করা আছে।’