প্রতি বছর কোরবানি ঈদের আগে ওজন ও দাম নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে বাহারি নামের গরু। সেই তালিকায় যোগ হয়েছে ৫০ মণ ওজনের কালো মানিক, যার দাম ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা।
গরুর মালিক ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা দক্ষিণ ভাটিপাড়া গ্রামের জাকির হোসেন সুমন। ছয় বছর আগে স্থানীয় বাজার থেকে ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড় গরু ৭৫ হাজার টাকায় কেনেন।
গত বছর কালো মানিক ৬ ফুট উঁচু ও ১০ ফুটেরও বেশি লম্বা ছিল। দাম হাঁকা হয়েছিল ৩০ লাখ। তখন ক্রেতারা সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা দাম বলায় বিক্রি করা হয়নি।
বর্তমানে গরুটি দৈর্ঘ্যে ১১ ফুট আর প্রস্থে সাড়ে ৭ ফুট। ওজন প্রায় ৫০ মণ। এবার মালিক কালো মানিকের দাম হাঁকাচ্ছেন ৪০ লাখ টাকা।
ফ্রিজিয়ান জাতের বিশাল আকারের ষাঁড় কালো মানিককে দেখতে ক্রেতাসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ জাকিরের বাড়িতে এসে ভিড় জমিয়েছেন। অনেকে গরুটিকে ‘হাতি’র সঙ্গে তুলনা করছেন।
জেলার ভালুকা থেকে ষাঁড় দেখতে আসা আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কালো মানিক সবার মুখে মুখে। আলোচিত ষাঁড়টি কিনতে এসেছিলাম। সব দিকেই পছন্দ হয়েছে। অতিরিক্ত দাম হাঁকাচ্ছেন খামারি। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে দাম বলব।’
আসাদুর রহমান তালুকদার নামে আরেকজন বলেন, ‘এর চেয়ে বড় ষাঁড় আমি আর দেখিনি। দেখলে যে কেউ পছন্দ করবে। তবে মাংসের চিন্তা না করে পছন্দ অনুসারে কিনতে হবে। কারণ ষাঁড়টির দাম প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।
‘কোরবানি দিতে চাওয়া যেকোনো ব্যক্তির পক্ষে এটি কেনা অসম্ভব। শারীরিক গঠন, কুচকুচে কালো রঙের জন্য দাপটে আছে কালো মানিক।’
ষাঁড়টির মালিক সুমন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রঙের সঙ্গে মিল রেখে নাম রাখি কালো মানিক। ষাঁড়টি আমি দেশীয় খাবার খাইয়ে যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে এত বড় করেছি। খাবার হিসেবে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা খরচ হয়। কৃত্রিম কোনো কিছু খাওয়ানো হয় না। প্রাকৃতিক উপায়ে খইল, ভুসি, ভুট্টা, কলা, ভাত, খড়, ঘাস খাইয়েছি।
‘আমি নিজের চেয়েও বেশি ষাঁড়টির যত্ন নিয়েছি। গত বছর এই গরুর সঙ্গে যেগুলো ছিল সবই বিক্রি করা শেষ। তখন ভালো দাম না পাওয়ায় কালো মানিককে বিক্রি না করে আরও বড় করেছি।
‘বাইরের দেশ থেকে আসা ছাড়া বাংলাদেশে নিজস্ব খামারে লালন-পালন করা এত বড় গরু আছে বলে আমার মনে হয় না। এ বছর আশা করছি ভালো দামে বিক্রি করতে পারব।’
ময়মনসিংহ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. মনোরঞ্জন ধর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবারও ক্রেতাদের চাহিদা এবং সুবিধার কথা চিন্তা করে হাটের পাশাপাশি অনলাইনে গরু কেনাবেচা হচ্ছে। এ ছাড়া হাটগুলোতে রয়েছে প্রাণিসম্পদের মেডিক্যাল টিম।
‘ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় খামারি এবং কৃষক পর্যায়ে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৫ লাখ ৫৮ হাজার গবাদিপশু, যা চাহিদার তুলনায় প্রায় দুই লাখ বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ময়মনসিংহ জেলায় চাহিদা রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার গরু। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার গরু প্রস্তুত রয়েছে।’