বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বিদ্যুৎ এলে ২০ মিনিট পর আবার চলে যাচ্ছে’

  •    
  • ৬ জুলাই, ২০২২ ১৪:০৯

নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন বলেন, ‘দিনের বেলায় রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ৬০০ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০০ মেগাওয়াট। সন্ধ্যার পর থেকে চাহিদা ৭০০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট। কবে নাগাদ ঠিক হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে কিছুটা উন্নতি হবে এমনটা আশা করা যায়।’

ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে রংপুর বিভাগের মানুষজন। হঠাৎ লোডশেডিং বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। এ ছাড়া ঈদ ঘিরে বেচাকেনার ভরা মৌসুমে ক্রেতা সংকটে পড়েছেন শপিংমল ও বিভিন্ন দোকানিরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎ মিলছে আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা। একবার বিদ্যুৎ এলে ২০ মিনিট পর আবার চলে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কিছু না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন ক্রেতারা।

জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম বলেন, ‘লোডশেডিং আর প্রচণ্ড গরমে মার্কেটে বেচাকেনা নেই। ক্রেতা নাই বললেই চলে। যারা আসেন তারা বেশিক্ষণ মার্কেটে থাকতে চান না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দিন পর ঈদ। এখন বেচাকেনার ধুম পড়ার কথা, কিন্তু ক্রেতা নেই। কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দিতে হবে। মহাজনকে বাকি মেটাতে হবে। এই অবস্থায় আমরা চরম বিপাকে আছি।’

দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরাও।

শ্রমিক রাশেদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৪০-৫০ মিনিট কাজ করি, আবার ২-৩ ঘণ্টা বসে থাকি। কাজ না করলে, উৎপাদন করতে না পারলে তো মালিক বেতন দেবে না।’

শহিদুল ইসলাম নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘কোনো কাজ নাই। বসে বসে দিন পার করতেছি।’

রংপুর নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রংপুর বিভাগে পিক আওয়ারে বিকেল ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে চাহিদা রয়েছে ৯২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫৭০ মেগাওয়াট। ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করে রেশনিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ক্যান্টনমেন্ট, সার্কিট হাউস, কেন্দ্রীয় কারাগারসহ সরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে হচ্ছে।’

রংপুর নগরীর প্রেস ক্লাব মার্কেটের ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার কম্পিউটার প্রিন্ট, ফটোকপির ব্যবসা। কয়েক দিন ধরে দিনে ২০০ টাকার ব্যবসাও করতে পারি না। এই অবস্থায় দোকানে চারজন কর্মচারী, বিদ্যুৎ বিল, দোকান ভাড়া এবং সামনে ঈদ কীভাবে সামলাব।

‘একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই লোডশেডিং দিলেও আমরা কিছুটা ব্যবসা করতে পারব। কখন বিদ্যুৎ যাবে, আর কখন আসবে তা কেউ জানে না।’

রংপুর সেন্ট্রাল রোডের নীতি ডিজিটালের মালিক এনামুল হক বলেন, ‘আমার প্রেসের ব্যবসা। বিদ্যুৎ ছাড়া আমরা একেবারে অচল। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে কোনো কাজ ঠিকমতো করতে পারছি না। কোনো কোনো সময় মেশিন চালু করার আগেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে আমার ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

‘একটা ডিজাইন করতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু ডিজাইন শুরু করে অর্ধেক কাজ শেষ না হতেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এ কারণে ব্যবসার অবস্থা ভালো না। প্রায় একই কথা বলেন বড় বড় শপিংমলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।’

শুধু দিনেই নয়, রাতেও চলে বিদ্যুৎ দুর্ভোগ। রয়ালিটি মেগামলের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘একদিকে তীব্র রোদ আরেক দিকে লোডশেডিং। ২০ মিনিট কারেন্ট থাকলে তিন ঘণ্টা পাওয়া যায় না। শুধু দিনের বেলা এ ভোগান্তি হয় না, রাতেও হয়। খুব দ্রুত এই সমস্যাগুলো সমাধান করা উচিত।’

এবার বেচাবিক্রি একদমই কম জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা এসে গরমের কারণে থাকতে চান না। তাছাড়া আইপিএস জেনারেটর দিয়ে এত বড় শপিংমল সামলানো যাচ্ছে না।’

সারা দেশেই লোডশেডিং হলেও রংপুরে তা ভয়াবহ।

হবিগঞ্জে সরকারি এক কর্মকর্তা আল-আমিন বলেন, ‘হবিগঞ্জে আমি চাকরি করি। কিন্তু এখানে তো এত লোডশেডিং তেমন নেই। আমার বাড়ি রংপুরে। খোঁজ নিয়ে দেখি ভয়াবহ অবস্থা। কিন্তু কেন হচ্ছে তা আমি জানি না।’

এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে ওয়েল্ডিং, ঝালাই, বিদ্যুৎচালিত মোটর, মেকানিকের যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুৎনির্ভর কাজ ও ব্যবসায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীসহ শ্রমিকরা।

জিএল রায় রোডের ওয়েল্ডিং ব্যবসায়ী মাইদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কখন কারেন্ট যায়, আর কখন আসে ঠিক নাই। কোনো কাজই করতে পারছি না। আমরা চাই নির্দিষ্ট একটা সময়ে লোডশেডিং হোক। তাহলে কিছুটা হলেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারব। তা না হলে শ্রমিক ছাঁটাই করতে হবে।’

নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রংপুর বিভাগে নেসকো আর পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দিনের বেলায় রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ৬০০ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০০ মেগাওয়াট। সন্ধ্যার পর থেকে চাহিদা ৭০০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট। কবে নাগাদ ঠিক হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে কিছুটা উন্নতি হবে এমনটা আশা করা যায়।’

এ বিভাগের আরো খবর