বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বগুড়ার হাটে হাটে দ্বিগুণ খাজনা আদায়

  •    
  • ৫ জুলাই, ২০২২ ২২:৪৪

কোরবানির হাটের অনিয়মের কথা জানালে বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, ‘আপনার অভিযোগটি শুনলাম। আমি সব ইউএনওকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলে দিচ্ছি।’

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় জমে ওঠেছে কোরবানির পশুর হাট। পছন্দের পশুটি কিনতে ব্যতিব্যস্ত এখন কোরবানিদাতারা। কিন্তু হাটের খাজনা দিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

অভিযোগ উঠেছে, হাটের নির্ধারিত খাজনা চেয়ে দ্বিগুণ টাকা দিতে হচ্ছে কোরবানির পশু ক্রেতাদের। এমনকি বিক্রেতাদের কাছে থেকেও টাকা আদায় করছে হাট ইজারাদাররা।

গত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার কয়েকটি হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বগুড়া সদর, শাজাহানপুর ও শিবগঞ্জের হাটগুলোতে এমন পরিস্থিতি চলছে। যদিও জেলা প্রশাসন থেকে কোরবানির হাটে বড় গরুর জন্য ৫০০, ছোট গরুর জন্য ৪০০ এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য ১৫০ টাকা মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে।

সদরের সাবগ্রাম পশুর হাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাট ইজারাদার প্রতি গরুর জন্য ক্রেতার কাছে থেকে ১ হাজার টাকা খাজনা আদায় করছেন। আর বিক্রেতার কাছ থেকে ২০০ টাকা। আর ছাগল কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাকে দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। বিক্রেতা দিচ্ছেন ১০০ টাকা।

জানতে চাইলে সাবগ্রাম হাটের ইজারাদার আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘খাজনার বেশি না নিয়ে উপায় নেই। এই হাটের মূল্য ১ কোটি টাকা। বেশি না নিলে ইজারার টাকা উঠবে কিভাবে?’

মঙ্গলবার শাজাহানপুরের দুবলাগাড়ী হাটেও অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের তথ্য পাওয়া যায়। এ হাটে প্রতিটি গরুর জন্য ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা আদায় করছিলেন ইজারাদারের প্রতিনিধিরা। আর ছাগল-ভেড়ার ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। কিন্তু রশিদের কোথাও টাকার কথা উল্লেখ নেই।

এ সময় অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের কারণ জানতে চাইলে রুহুল আমিন নামে ইজারাদারের এক প্রতিনিধি তা অস্বীকার করেন।

পরে শাজাহানপুরের ইউএনও আসিফ আহমেদও হাট পরিদর্শনে গিয়ে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ পান। এ সময় ইজারাদারকে সতর্ক করেন তিনি।

উপজেলার বামুনিয়া গ্রামের আতিকুর রহমান অভিযোগ করেন, দুবলাগাড়ী হাটে তিনি ৮৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেন। খাজনা দিতে গেলে তার কাছে ৮০০ টাকা দাবি করা হয়। পরে ইউএনওর উপস্থিতিতে ৫০০ টাকা খাজনা দেন তিনি।

এ বিষয়ে ইউএনও আসিফ আহমেদ বলেন, ‘দুবলাগাড়ী হাটে নির্ধারিত টোলের চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছিল। পরে হাটের সবাইকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিই।’

শিবগঞ্জ উপজেলায় সরকার নির্ধারিত ১৪টি পশুর হাট আছে। মঙ্গলবার উপজেলার আলিয়ার হাটেও অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতে দেখা গেছে। এই হাটে গরু কিনতে আসা উপজেলার বাদলাদীঘি গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস জানান, প্রতি গরুতে সরকারি খাজনা ৫০০ হলেও নেওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। ক্রেতা দিচ্ছে ৫০০ টাকা এবং বিক্রেতারা দিচ্ছে ১০০ টাকা।

আলিয়ার হাটের ইজারাদার জাহিদুল বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত খাজনার বাইরে কোনো টাকা নেয়া হচ্ছে না। ক্রেতা বিক্রেতারা যাতে প্রতারিত না হন সেজন্য মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে এবং পুলিশ নিয়োজিত আছে।’

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে কুলসুম শম্পা বলেন, ‘খাজনা আদায়ের বইয়ে টাকার পরিমাণ লিখতে বলা হয়েছে। কোনো অনিয়ম পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এর আগের দিন সোমবার ছিল শহরের বনানী এলাকায় সুলতানগঞ্জ হাট। এই হাটেও একই অবস্থা। এই হাটে ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতিটি গরুর জন্য ১ হাজার টাকা এবং ছাগল-ভেড়ার জন্য ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর বিক্রেতাদের কাছ থেকে গরুর জন্য ২০০ টাকা এবং ছাগল-ভেড়ার জন্য ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ছোট-বড় সব গরুর ক্ষেত্রেও একই খাজনা আদায় করা হচ্ছে।

গরু কিনে ফেরার সময় এ বিষয়ে কথা হয় বগুড়া শহরের কলোনী চকফরিদ এলাকার জামিল মকদুমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গরু কিনেছি ১ লাখ টাকায়। আর খাজনা দিতে হয়েছে ১ হাজার টাকা। আসলে এই খাজনার মূল্য ৫০০ টাকা। কিন্তু হাটের লোকজন জুলুম করে ১ হাজার টাকা নিয়েছে।’

তার কাছে গরু বিক্রি করেন ‍ধুনটের ফটিক। তিনি বলেন, গরু বিক্রি করার জন্য আমাকেও ২০০ টাকা দিতে হয়েছে।

ছাগলের হাটের অংশে গিয়েও দেখা যায় অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের চিত্র। এখানে প্রতি ছাগলের জন্য খাজনা নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা।

ছিলিমপুর ইসলামপুর এলাকার সাকিব জানান, তিনি সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে ছাগল কিনে ৫০০ টাকা খাজনা দিয়েছেন। এ সময় ছাগলবিক্রেতাও ১০০ টাকা খাজনা দেন।

এই হাটের ইজারাদারের নাম সাজেদুর রহমান সাহিন। অতিরিক্ত খাজনা নেয়ার বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

খাজনা পরিশোধের রশিদে টাকার পরিমাণ উল্লেখ না করারও অভিযোগ আছে

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গত ২৭ জুন বগুড়া জেলা প্রশাসন থেকে কোরবানির হাটের ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পশু বাঁধার খুঁটি স্থাপন এবং নির্ধারিত হারে খাজনা আদায় নিশ্চিতকরণ। কিন্তু হাটগুলোয় এসব নিয়ম মানার কোনো দৃশ্যই চোখে পড়েনি।

কোরবানির হাট শুরু হওয়ার পর থেকে এমন অনিয়ম হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা হাট পরিদর্শনের গিয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেননি।

কোরবানি পশুর ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে জানতে চাইলে বগুড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) উজ্জল কুমার ঘোষ জানান, হাটের খাজনা আদায়ে টাকার অঙ্ক অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে। সরকার পশুর খাজনা নির্ধারণ করে দিয়েছে। বড় গরুর ক্ষেত্রে এই মূল্য হবে ৫০০ টাকা। ছোট গরুর জন্য ৪০০ এবং ছাগল-ভেড়ার জন্য ১৫০ টাকা।’

কোরবানির হাটের অনিয়মের কথা জানালে বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, ‘আপনার অভিযোগটি শুনলাম। আমি সব ইউএনওকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলে দিচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর