বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পদ্মা সেতু ইট-কাঠের স্থাপনা নয়, এটি আত্মমর্যাদা: শেখ হাসিনা

  •    
  • ৩ জুলাই, ২০২২ ১৪:৩৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে আমাদের ওপর একটা বদনাম দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। শুধু সরকার বা রাষ্ট্রের ওপরে না, এমনকি আমার পরিবার, আমার ছোট বোন, আমার ছেলে-মেয়ে, বোনের ছেলে কেউ কিন্তু বাদ যায়নি। আমার মন্ত্রী, সচিব, উপদেষ্টা, প্রত্যেকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল, একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে।’ কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে বিশ্বাস করতেন সরকারপ্রধান।

দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের জাঁতাকলে থেকে বাংলাদেশ যখন পরমুখী, আত্মবিশ্বাস যখন তলানিতে, তখনই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণায় বাঙালি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই পদ্মা সেতু শুধু ইট-কাঠের স্থাপনা হিসেবে নয়, দেশের আত্মমর্যাদার প্রতীক হিসেবে দেখছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

পদ্মা সেতু দিয়ে আসা ১৯ জেলার যানবাহন ও পণ্য পরিবহনকে সহজ করতে ঢাকাকে ঘিরে রিংরোড নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। সায়েদাবাদ বা কাঁচপুরসহ ঢাকা শহরে চারটি কাঁচাবাজার নির্মাণ করে পণ্য পরিবহনকে সহজ করার কথাও জানালেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোববার সকালে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান। এদিন বার্ষিক কর্মসম্পাদন পুরস্কার ২০২২ এবং শুদ্ধচার পুরস্কার ২০২২ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে আমাদের ওপর একটা বদনাম দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। শুধু সরকার বা রাষ্ট্রের ওপরে না, এমনকি আমার পরিবার, আমার ছোট বোন, আমার ছেলে-মেয়ে, বোনের ছেলে কেউ কিন্তু বাদ যায়নি। আমার মন্ত্রী, সচিব, উপদেষ্টা, প্রত্যেকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল, একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে।’

কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে বিশ্বাস করতেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘একটা পর্যায়ে আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব। এটা আসলে আমাদের মতো দেশে অনেকে বিশ্বাস করতে পারেনি। বা বিদেশেও অনেকের পক্ষে এটা মেনে নেয়া সম্ভব হয়, আমরা কী পারি।

‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো যে দীর্ঘদিন সামরিক শাসন চলাকালীন আমাদের এত বেশি পরনির্ভরশীল করে ফেলা হয়েছিল যে আমাদেরও যে একটা শক্তি আছে, স্বকীয়তা আছে বা আমাদের কর্মক্ষমতা আছে বা চিন্তাচেতনা আছে, সেটাই যেন মানুষ ভুলতে বসেছে।

‘এটাই সব থেকে দুর্ভাগ্যের। মানুষ যখন এ ধরনের ভুলে যায় বা নিজের শক্তি সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস হারায় সে জাতিকে টেনে তোলা খুব কষ্টকর। তবে বাঙালি জাতি সম্পর্কে আমি এটাই বলব, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণে যে কথা বলেছিলেন যে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না এ কথা তিনি বলে গিয়েছিলেন এ জন্য, তিনি বাংলার মানুষকে চিনতেন। আমিও তার কন্যা হিসেবে অন্তত তার পাশে থেকে মানুষকে কিছুটা চেনার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই সাহস নিয়ে বলেছিলাম নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু আমরা করব।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে সেই পদ্মা সেতু আমরা করতে পেরেছি। এটা শুধু একটা ইট, কাঠ বা স্টিল বা কংক্রিটের একটা স্তম্ভ না বা স্থাপনা না, এটা আমাদের আত্মমর্যাদা। আত্মমর্যাদার একটা নিদর্শন। আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি।’

বছর খানেকের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটাই আমি মনে করি, ওই একটা সিদ্ধান্ত সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছিল এবং বিশ্বদরবারে আজকে আর কোনো দেশের জনগণের কাছে কোনো বাঙালিকে মাথা নিচু করে চলতে হবে না। বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে আমরা চলব।’

বাংলাদেশ তার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘উন্নত দেশ পারবে তা না, আমরাও পারি। ইনশাল্লাহ উন্নত দেশে একদিন আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। এটাই আমাদের বিশ্বাস, সেটা আমি করতে পারব।’

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল ও পণ্য পরিবহন

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু পদ্মা সেতু হয়ে গেছে, এখন দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রচুর পণ্য আসবে। আমি কিন্তু এর পূর্বে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, শুধু কারওয়ান বাজার আমাদের একটা হোলসেল মার্কেট কাঁচা শাকসবজি, মাছের জন্য।

‘এখানে আমরা ঢাকা শহরে আমিনবাজারের ওইদিকে, মহাখালী এবং সায়েদাবাদের ওইদিকে অথবা কাঁচপুরে আর পশ্চিম দিকে আরেকটা–চারটা জায়গায় চারটা কাঁচাবাজার নির্মাণের একটা সিদ্ধান্ত রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চল থেকে যে পণ্যগুলো আসবে, সেগুলো কাঁচপুরের ওখানে একটা ভালো কাঁচাবাজার করে সেগুলো সেখানেই যেন সংরক্ষণ করে সরবরাহ করতে পারি সেই ব্যবস্থাটা নেয়ার কথা ছিল, জানি না সেটা কতদূর বাস্তবায়ন হয়েছে। সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে ঢাকা শহরে যে চাপটা আসবে সেটা যেন না থাকে, সেটা আমাদের দেখতে হবে।’

পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে আসা ১৯ জেলার যানবাহন যেন ঢাকা শহরের ‍ওপরে বাড়তি চাপ তৈরি না করে সেই ব্যবস্থাপনা দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করারও তাগিদ ছিল প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমাদের পদ্মা সেতু থেকে যে বিশাল ট্রাফিক আসবে, সেটা তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য আমাদের ঢাকাকে ঘিরে যেটা রিংরোড করা, তার ব্যবস্থাটা করা। কিছু কিছু জায়গায় অলরেডি কাজ শুরু হয়েছে। সে ধরনের ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। যাতে করে আমরা আমাদের পণ্য পরিবহন, বাজারজাতকরণ এবং মানুষের চলাচল যাতে সহজ হয়, সেই ব্যবস্থাটা করা।’

চলতে হবে মাথা উঁচু করে

জনপ্রশাসনে কর্মরত সবাইকে মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে দেশের উন্নয়নের গতিধারা সচল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব সময় নিজেকে একটা মর্যাদাশীল রাষ্ট্র এবং মর্যাদাশীল জাতির একজন সদস্য হিসেবে, এটা মাথায় রেখে আমাদের যা কিছু যতটুকু সম্পদ আছে সেটাই কাজে লাগিয়ে যেন আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি দেশকে, সেই চিন্তা থেকেই কিন্তু সবাইকে চলতে হবে।’

পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে সবারা উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারাটা যেন অব্যাহত থাকে আমি শুধু সেটুকুই চাই।’

বন্যা নিয়েও সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বন্যার প্রকোপ থাকবে। বন্যা নিয়ে আমাদের বাঁচতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা আমাদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে, চলতে হবে। আমাদের মানুষের জীবন ক্ষয় যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের সব পরিকল্পনা।’

বিশ্বজুড়ে কঠিন সময়

করোনার অভিঘাত থেকে ঘুরে না দাঁড়াতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সব থেকে একটা কঠিন সময় গেল, সেটা হলো এই করোনা মহামারি। আর করোনা মহামারি যেতে না যেতে এখন আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এটি সমগ্র বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে। আর আমাদের মতো দেশ সেখানে তো আরও বেশি এটির প্রভাব পড়েছে।

‘তারপর ও আমি বলব, ধন্যবাদ জানাব প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়, আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন বলে এই অবস্থা থেকেও দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি।’

ইশতেহার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

জনগণের সামনে যে ইশতেহার ঘোষণা করে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ, তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যটা হলো আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছি, আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা রাজনীতি করি। আমাদের দল আছে। আমরা যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, একটা নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করি।

‘ইশতেহারে আমরা এ দেশকে কীভাবে আর্থসামাজিকভাবে উন্নত করব, সেই নির্দেশনা বা সেই কর্মপরিকল্পনারই একটা কাঠামো থাকে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, কখনও আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারটা কিন্তু ফেলে দিইনি। প্রতিবার বাজেট করার সময় সেটাকে অনুসরণ করে কিন্তু আমাদের কর্মপরিকল্পনা এবং কতটুক আমরা সফল করতে পেরেছি, কতটুকু আরও করা বাকি সেটাও কিন্তু আমরা নির্দিষ্ট করি। আমাদের দলের একটা ঘোষণাপত্র থাকে, গঠনতন্ত্র থাকে, সেখানে কতগুলো দিকনির্দেশনা থাকে সেটা আমরা কিন্তু বাস্তবায়ন করি।’

সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার পুরোটাই তৃণমূল পর্যায় থেকে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এভাবে চিন্তা করিনি যে শুধুমাত্র ধনী থেকে ধনী হোক। আমরা চেয়েছি একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে অবহেলিত মানুষগুলো...আমাদের লক্ষ্যই ছিল এই মানুষগুলোর ভাগ্য আমাদের পরিবর্তন করতেই হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর