৬ মাস বয়স থেকে মায়ের দুধ খাওয়া বন্ধ করেছে গরুটি। ছোট থেকে দুধ খেতো আর ঘুমাত। দুধ ছাড়ার পর থেকেই প্রাকৃতিক খাবার খেয়েও বেড়ে উঠেছে সে।
গরুটির বয়স এখন ৬ বছর। ওজন ১ হাজার ৬০০ কেজি।
গরুটি এতটাই শান্ত প্রকৃতির যে, কখনও কাউকে আঘাত দেয়নি, ছোটাছুটি বা দুষ্টমি করেনি।
ভালোবেসে গরুর মালিক নাম রেখেছেন ‘ভদ্র বাবু’।
একই বাড়ির সম্পূর্ণ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের আরেকটি গরু রয়েছে। ছোট থেকেই দুষ্টু প্রকৃতির। অন্য গরুকে বিরক্ত করা, লাফালাফি করাই তার কাজ। তার দেয়া আঘাত থেকে রক্ষা পাননি মালিকও।
বর্তমানে তার বয়স ৩ বছর। ওজন ১ হাজার ২০০ কেজি। স্বভাবের সঙ্গে মিল রেখে মালিক নাম রেখেছেন ‘দুষ্টু বাবু’।
রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার গজঘণ্টার কিসামত হাবু গ্রামের রওশনুল ইসলামের নিজ বাড়িতে আছে গরু দুটি।
শখ করে পালা গরু দুটিকে এবারের কোরবানির হাটে বিক্রি করতে চান। ভদ্র বাবুর দাম হেঁকেছেন ১৫ লাখ, আর দুষ্টু বাবুর ১০ লাখ।
ধারণা হচ্ছে, রংপুরের সবচেয়ে বড় গরু এই দুটি।
গরুর মালিক রওশন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি প্রাণিসম্পদ বিভাগে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। আমার হাত দিয়ে শত শত গরুর খামার হয়েছে। এক দিন আমিও ভাবি নিজে খামার দেবো। ২০১৩ সালের শেষের দিকে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের একটা গরু কিনি। সেই গরুকে বীজ (ক্রস বীজ) দিয়ে একটা মেয়ে বাছুর হয়, সেই বাছুর বড় হলে আরেকটা মেয়ে বাছুর জন্ম দেয়। সে আবার একটা মেয়ে বাছুর দেয়। টোটাল ৯ বছরে ১২টি গরুর মালিক আমি।
‘প্রথম গরুটা দুধ দিত দেড় কেজি। ওই গরুর মেয়ে দুধ দিত ৬ কেজি, তার মেয়ে দিচ্ছে ১৩ কেজি। যে গরুটি ১৩ কেজি দুধ দিচ্ছে তারই ছেলে ভদ্র বাবু। আর দ্বিতীয় ছেলে হলো দুষ্টু বাবু।’
রওশন বলেন, ‘গত বছর ভদ্র বাবুকে নিয়ে গাবতলী হাটে যাই। সেখানে দাম উঠেছিল সর্বোচ্চ ১২ লাখ টাকা। কিন্তু আমি ১৫ লাখ হলে দিতাম। তাহলে আমার খরচটা উঠত। আবার এদিকে এক বছর গেল। শুধু খরচটা ওঠার জন্য দাম চাচ্ছি ১৫ লাখ টাকা। আর দুষ্টু বাবুর দাম চাচ্ছি ১০ লাখ টাকা।
‘কাঁচা ঘাস, খড়, গুড়া, ভুসি, খুদ খাওয়াই। অন্য কোনো মেডিসিন দেয়া হয় না গরু দুটিকে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে বড় করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গরু দুটির কোনো রোগ নাই। একদম জিরো বলা যায়। অন্য কোনো ওষুধও খাওয়া হয় না। ভ্যাটেনারি সার্জনরা আসেন মাঝে মাঝে। তাদের পরামর্শে সুস্থ্য রাখতে কিছু ওষুধ দিতে হয়। কিন্তু মোটা তাজাকরণের জন্য কোনো মেডিসিন দেয়া হয় নাই।’
রওশনের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমি দিনরাত পরিশ্রম করছি গরু দুটির জন্য। যেমন মা তার সন্তানকে লালন-পালন করে, তেমন করে গরু দুটিকে বড় করছি। গরু দুটি বিক্রির কথা ওঠলে মনটা ভীষণ খারাপ হয়।
‘আমি নিয়ম করে তিনবেলা খাবার দেই, গোসল করাই। প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬০০ টাকার খাবার খাওয়ানো হয়।’
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছি। অনেকে কোরবানি উপলক্ষে বড় বড় গরু প্রস্তুত করেছেন তাদের খোঁজ রাখছি। পরামর্শ দিচ্ছি যেন গরুগুলো সুস্থ্য থাকে।
এ বছর রংপুর জেলার ২৫ হাজার ৭১ জন খামারির কাছে রেকর্ড পরিমাণ সাড়ে তিন লাখ পশু রয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে। জেলার বাইরে থেকে পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন হবে না। বরং রংপুরের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্য জেলায় পাঠানো সম্ভব হবে।’