এবারের কোরবানির ঈদের জন্য প্রায় ৫৪ হাজার গরু প্রস্তুত করেছেন ফরিদপুরের খামারিরা। তবে জেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৪১ হাজারের মতো।
ফরিদপুরের বড় আকারের ষাঁড়ের মধ্যে ৩৮ মণ ওজনের সম্রাট এরই মধ্যে বাজার কাঁপিয়েছে। ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুর দাম হাঁকা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
তবে ফরিদপুরে বড় গরু কেনার মতো জুতসই ক্রেতা মিলছে না। তাই তো পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে রাজধানীর বাজার কাঁপাতে ঢাকায় রওনার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
সাড়ে তিন বছরের এই গরু লম্বায় বুক থেকে পেছন পর্যন্ত ১১ ফুট এবং এর উচ্চতা পা থেকে পিঠ পর্যন্ত প্রায় ৬ ফুট।
মালিকের আশা, পদ্মা সেতুর বদৌলতে এবার হয়তো তিনি কাঙ্ক্ষিত ক্রেতাও পেয়ে যাবেন। এ লক্ষ্যে নেয়া হচ্ছে সব ধরনের প্রস্তুতি।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৫৩ হাজার ৮০০ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ফরিদপুরে কোরবানির পশুর চাহিদা ৪১ হাজারের কিছু বেশি। সেই হিসাবে ফরিদপুরের প্রায় ১২ হাজারের বেশি গরু উদ্বৃত্ত রয়েছে, যেগুলো ফরিদপুরের বাইরে বিক্রি করা যাবে।
জেলায় ৩৩টি পশুর হাট ছাড়াও অনলাইনে গরুর হাটেও এসব পশু বেচাকেনা হবে। এর মধ্যে ফরিদপুর শহরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বিলমামুদপুরে অবস্থিত মাইশা ডেইরি ফার্মের ৩৮ মণ ওজনের ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড় গরু ফরিদপুরের সবচেয়ে বড়।
ফরিদপুরের মাইশা ডেইরি ফার্মে ১০৭টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সম্রাট।
এই খামারের শ্রমিকরা জানান, বড় গরু পালন অনেক কষ্টের কাজ। ভোর ৪টা থেকে উঠে আমরা গরুর খামারের কাজ শুরু করি। প্রতিমুহূর্তে এদের জন্য খাবার তৈরি করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।
রোগাক্রান্ত হলে সেই গরুকে আলাদা সরিয়ে ফেলতে হয়।
মাইশা ফার্মের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম সবুজ জানান, নিজের ফার্মে ৪২ মাস আগে সম্রাটের জন্ম। সব মিলিয়ে এখন এর শরীরে মাংস রয়েছে ১ হাজার ২০০ কেজি। প্রাকৃতিক ঘাস আর বিশেষ যত্ন নিয়েই বড় করে তোলা হয়েছে। সঙ্গে বিশেষ কিছু খাবার হিসেবে তাকে দেয়া হয় আপেল, কমলা ও আঙুর। এ ছাড়া প্রতিদিনের খাবার হিসেবে তাজা ঘাস, খড়, গম, ভুসি ও খইল এসবই খাওয়ানো হয়।
সবুজ বলেন, ‘বড় গরু পালন খুবই কষ্টসাধ্য। কারণ এখানে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা মেলে না। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার সময়-সুযোগমতো আমরা সম্রাট পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় কোরবানির পশুর হাটে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। অনলাইনেও বিক্রির জন্য তথ্য দেয়া রয়েছে।’
ফরিদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নুরুল আহসান বলেন, ‘এ বছর গবাদিপশুর খাদ্যের মূল্য একটু বেশি ছিল, তবে এখন আবার সেটি সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। আমরা আশা করছি খামারিরা ভালো দাম পাবেন। আমাদের দেশীয় তথা ফরিদপুরের গরু দিয়েই আমাদের চাহিদা পূরণ করে বাইরে পাঠাতে পারব।’
রফিকুল ইসলামের মতো তিনিও একইভাবে ফরিদপুরে বড় গরু বিক্রির ক্রেতা না থাকার সমস্যার কথা জানান এবং পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এসব বড় গরু বিক্রির পথ সুগম হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘কোরবানির পশুর হাটে ৯টি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল দল কাজ করবে।’