ঢাকার সাভারে ছাত্রের মারধরে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার নিহতের ঘটনায় পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর সেই কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছে।
ঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার ক্লাস শুরু হয়। বেলা ১১টায় শুরু হবে মাধ্যমিক ও কলেজ শাখার পাঠদান।
কলেজ কর্তৃপক্ষ শুক্রবার দুপুরে শিক্ষক উৎপল স্মরণে শোক ও মতবিনিময় সভায় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানায়। সে সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দেয়া হয়।
কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান শনিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকালের ঘোষণার পর আজ থেকে আমরা পাঠদান শুরু করেছি। মর্নিং শিফটে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। ১১টা থেকে হাইস্কুল ও কলেজের ক্লাস চালু হবে।
‘আগামীকাল আমাদের ঈদের ছুটি দেয়া হবে। ১৬ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। আসলে এখনও অনেকের আতঙ্ক কাটেনি। তার ওপর ঈদ চলে আসায় অনেক শিক্ষার্থী ঢাকার বাইরে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে।’
- আরও পড়ুন: বিয়েবার্ষিকীতে এত কষ্ট কেন বিউটির
স্কুলে এসে উৎপলকে স্মরণ করেন তার প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীরা।
স্মৃতিচারণ করে শিশু শ্রেণির শিক্ষক তামান্না আক্তার বলেন, ‘স্যার খুব ভালো মানুষ ছিলেন। যখনই পরীক্ষা হতো স্যার এসে জিজ্ঞেস করতেন, কোনো সমস্যা আছে কি না? আমার এই স্কুলে জয়েন করার পর স্যার ছাড়া আজ আমার প্রথম ক্লাস।
‘মনে আছে আমার, আমি অসুস্থ বোধ করার পর স্যার একদিন আমাকে পরীক্ষায় ডিউটি না করতে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। স্যারের জন্য সকাল থেকেই মন খারাপ। ক্লাসে সেভাবে মন বসছে না।’
দিবা আফরিন নামে আরেক শিক্ষক উৎপলের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার প্রশ্ন সব স্যার আমাকে বুঝিয়ে দিতেন। স্যার বাচ্চাদের খুব ভালোবাসতেন। খুব খারাপ লাগছে এখনও। ভাবতেই পারছি না স্যার আমাদের মাঝে নেই। কীভাবে সব বদলে গেল চোখের সামনে!’
উৎপলের খুব কাছের সহকর্মী ছিলেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘উনার অনুপস্থিতিটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে উনার জন্য। আমরা দুইজন ২০০২ সালে এসএসসি পাস করেছি। তবে আমি যখন এখানে জয়েন করি তখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিনি আমার দুই বছরের সিনিয়র। আমরা একসঙ্গে রুম শেয়ার করেছি।
‘এখন উৎপল স্যারের অনুপস্থিতিতেই আমাদের ক্লাস শুরু করতে হচ্ছে। কারণ বাচ্চাদের কথাটাও চিন্তা করতে হবে। ওদের ভবিষ্যত কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। পাশপাশি উৎপল স্যারের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জন্য আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে।’
আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার এই কলেজের মাঠে গত ২৫ জুন দুপুরে মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুর বিরুদ্ধে। পরদিন সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর আহত উৎপল মারা যান।
ওইদিনই উৎপলের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় জিতু ও অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ২৯ তারিখ পুলিশ জিতু ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করে।