মাওয়া-শিবচর রুটে পদ্মা সেতু চালুর পর বদলে গেছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথের চিরচেনা রূপ। কিছুদিন আগেও ঘাট এলাকা ছিল লোকেলোকারণ্য। এখন সেখানে হাতেগোনা যাত্রী ও যানবাহন। এরই মধ্যে লোকসান গুনতে শুরু করেছেন হোটেল ব্যবসায়ী ও হকাররা।
রাজধানী থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম নৌপথ মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট। যাত্রী ও যানবাহন পারপারের জন্য পাটুরিয়ায় পাঁচটি ফেরিঘাট ও একটি লঞ্চঘাট রয়েছে। ঘাটকে কেন্দ্র করে হোটেলসহ বিভিন্ন ধরনের পাঁচ শতাধিক দোকান গড়ে ওঠে। আরও কয়েক শ ভ্যানে অস্থায়ী দোকান ছিল ঘাট এলাকায়।
সরেজমিন দেখা যায়, মাওয়া-শিবচর রুটে পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী ও যানবাহন কমে গেছে পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাটে। ঘাটে নেই চিরচেনা যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। ফাঁকা ট্রাক টার্মিনালও। লঞ্চে কিছু যাত্রী পার হলেও যাত্রী ও যানবাহনের জন্য অপেক্ষ করছে ফেরিগুলো। হোটেলগুলোতে নেই ক্রেতা। বেকার বসে আছেন হকাররা।
বাসচালক রনি মিয়া বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হইতে না হইতেই ঢাকা-আরিচা সড়কে অনেক যাত্রী কমে গেছে। আগের তুলনায় ২০ ভাগ গাড়ি রাস্তায় চলতেছে। বাকি গাড়ি বসে রইছে। যাত্রীও একেবারে কম। গাড়ি আর নিজের খরচ কামাইতেই কষ্ট হইতেছে। মাঝেমধ্যে খাওন খরচ নিয়েই চিন্তায় পড়ে যাই।’
হকার রিয়াজুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর আগে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা ঘাটে দেড় শর মতো হকার ছিল, এখন ১০-১৫ জন আছি। বাকিরা অন্য কাজে গেছে। আগে দৈনিক দেড় থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি করতাম। বর্তমানে এক দিনে ৪০০-৫০০ টাকা বিক্রি করা যায়। এতে করে মহাজনরে দিমু কী। মাকে-ছায়ালকে ভাত দিমু কেমনে।’
হোটেল মালিক গোবিন্দ কুমার সরকার বলেন, ‘সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন ৫-৬ হাজার টাকার বিক্রি করতাম। এখন ৫০০-৬০০ টাকার বিক্রি করি। অনেক দিন তাও বিক্রি করতে পারি না। বেচাকেনা না হলে পাঁচ-সাতজন কর্মচারীকে কেমনে বেতন দিমু। ঘাটে মানুষ না আসায় অবসর কাটাইতে হইতেছে আমাগো। এখন সরকার যদি সাহায্য না করে, তাহলে আমাগো বিপদ হইয়া যাইব।’
পাটুরিয়া লঞ্চ মালিক সমিতির সুপারভাইজার পান্না লাল নন্দি বলেন, ‘পদ্মার সেতু চালুর আগে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার যাত্রী পার হতো এবং আয় হতো দেড় থেকে পৌনে ২ লাখ টাকা। এখন আয় দাঁড়াইছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। লঞ্চে ৭০ ভাগ যাত্রী কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের লঞ্চ চালাতে কষ্ট হবে, লঞ্চের ব্যবসা বাদ দিতে হবে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার যানবাহন পারপার করা হতো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার যানবাহন পারাপার হচ্ছে। অনেকে শখ করেও সেতু দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি, ঈদের আগে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়বে। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে হয়তো আগের মতো যানবাহন পারাপার হবে।’
এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুর রহমান জানান, পাটুরিয়া ঘাটের হকারদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের কাজ দেয়া হবে।