পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়নি- এটি প্রকাশ করতে পারলে বিএনপি সরকারকে ধন্যবাদ জানাবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
দলটির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এখনও বন্দি আখ্যা দিয়ে গয়েশ্বর এও বলেছেন, খালেদা জিয়াই এই ধন্যবাদ দিতে পারতেন সরকারকে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি নেতা এসব কথা বলেন।
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির ৭ নেতাকে আমন্ত্রণ জানালেও তারা তাতে অংশ নেননি। সেদিন বিএনপির কোনো নেতা কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেননি, পদ্মা সেতু নিয়ে একটি বক্তব্যও বলেননি।
২০১১ সালে বিশ্বব্যাংক যখন এই সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ তোলে, তখন বিএনপির সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার পর বিএনপি বলতে থাকে, সরকার দুর্নীতি করতে গিয়ে দেশকে এই সেতু থেকে বঞ্চিত করছে।
তবে ২০১৭ সালে কানাডার আদালত যখন এ সংক্রান্ত একটি মামলা খারিজ করে দিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে বায়বীয় ও গালগপ্প বলে উড়িয়ে দেয়, তখন বিএনপি আর কিছু বলেনি। তবে এখনও দলটি এই সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছে, যদিও তাদের অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট নয়।
গয়েশ্বর বলেন, ‘যে প্রকল্পে দুর্নীতি হয়, সেই প্রকল্পের জন্য আমরা ধন্যবাদ দিতে পারি না। আপনারা শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন যে কত টাকা কোন খাতে ব্যয় হয়েছে। দুর্নীতি হয়নি-এটা যদি প্রমাণ করতে পারলে, ধন্যবাদ দেয়া যাবে।’
বিএনপির সাত নেতাকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বেগম খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ না জানানোর সমালোচনা করেন গয়েশ্বর। বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া একটি ধন্যবাদ দিতে পারতেন। আইনমন্ত্রী বললেন, খালেদা জিয়াকে দাওয়াত দিতে কোনো বাধা নেই। যদি বাধা না থাকে তাহলে খালেদা জিয়াকে দাওয়াত দিতে বাধা হলো কেন?
‘তিনি (সরকার) আমার নেত্রীকে (খালেদা জিয়া) দাওয়াত দিলেন না, দাওয়াত দিলেন আমাদের কয়েকজনকে (সাতজন নেতা)। আমরা যদি ওই দাওয়াত কবুল করতাম, তাহলে রাস্তায় হাঁটতে পারতাম?’
পদ্মা সেতুর জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেরও সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘আনন্দ উৎসবের জন্য যে টাকা ব্যয় করা হয়েছে, তা যদি বন্যাদুর্গতঅসহায় মানুষদের জন্য ব্যয় করত তাহলে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কিঞ্চিত হলেও প্রশংসিত হতে পারতেন।
‘যার কলঙ্ক ভালো লাগে তাকে সুপরামর্শ দেওয়া যুক্তি নেই। আসলে লজ্জা, শরম নেই। কারণ, যে পরিমাণ গুম, খুন, নির্যাতন করা হচ্ছে, এটা ছাড়া তাদের টিকে থাকার উপায়ও নেই। উনি জনগণের ভালোবাসা, আস্থার প্রয়োজন মনে করেন না, উনি মনে করেন যতদিন প্রতিবেশী আছেন, ততদিন উনি ক্ষমতায় আছেন।’
জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন চৌধুরীর এক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তারও সমালোচনা করেন গয়েশ্বর। বলেন, ‘এক পাগল দেখলাম জাতীয় সংসদে বলেছে, ড. ইউনূস, বেগম খালেদা জিয়া ও হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিতে। স্যাংশন শব্দের অর্থ বোঝ? খালেদা জিয়াকে জেলে দিয়ে রেখেছে, তাকে আর স্যাংশন কী?’
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়-এই সিদ্ধান্তে অটল থাকতেও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি নেতা। বলেন, ‘যদি শেষ দিন পর্যন্ত আমরা অটল থাকতে পারি, তাহলে শেখ হাসিনা সরকার নেই। তার নির্বাচন করার ক্ষমতা নাই নাই নাই...।
‘ভেলকিবাজি তিনি (শেখ হাসিনা) যা করার করেছে; নতুন করে ভেলকিবাজি করার ক্ষমতা নেই। তাই সব রাজনৈতিক দল সবাইকে বলব, আপনারা একটা জায়গায় অটল থাকেন-এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মফিজুর রহমান লিটনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ২০ দলীয় জোটের শরিক ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি।