রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহতদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা।
জঙ্গি হামলার ছয় বছর পূর্তিতে শুক্রবার সকালে হোলি আর্টিজান ভবনের সামনে অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।
সকাল সাড়ে ৭টায় প্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। এরপর ইতালির রাষ্ট্রদূত ইনরিকো নুনজিয়াতা, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এবং ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আমরা খুবই ব্যথিত। বাংলাদেশের পুলিশসহ সাধারণ মানুষ এতে মারা গেছেন।
জঙ্গি হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, ইতালির রাষ্ট্রদূত ইনরিকো নুনজিয়াতা, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এবং ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। ছবি: নিউজবাংলা
‘আমাদের সব মনে রাখা উচিত এই ঘটনাগুলো কেন ঘটেছে। আমাদের উচিত যৌথভাবে এসব মোকাবিলা করা, যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছয় বছর আগের এই ঘটনায় আমাদের সাতজন নাগরিক মারা গেছেন, তারা সবাই জাইকার ঢাকা মেট্রো লাইন-১ প্রজেক্টে কাজ করতেন। তারা রিসার্চের কাজ করছিলেন। আমরা তাদের কখনও ভুলব না, ওইদিন কী ঘটেছিল তা আমরা কখনও ভুলব না।
‘বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ ও সম্পর্ক রয়েছে। এই সেপ্টেম্বরে লাইন-১-এর কাজ শুরু হবে। এই কাজটা চালিয়ে এবং শেষ করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের দায়িত্ব।’
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত ৮টা ৪২ মিনিটে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের হোলি আর্টিজান বেকারিতে পাঁচ জঙ্গি আগ্নেয়াস্ত্র ও গ্রেনেড নিয়ে হামলা চালায়। সেখানে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় তারা। বেকারিতে আসা দেশি-বিদেশি অতিথিদের বেছে বেছে হত্যা করতে শুরু করে, স্টাফদের রাতভর জিম্মি করে রাখে।
রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের নেতৃত্বে পুলিশ ও র্যাব যৌথ অভিযান চালায় ওই ভবনে। অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’।
কমান্ডো অভিযানে মারা যান পাঁচ জঙ্গি। তারা হলেন রোহান ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। উদ্ধার করা হয় হোলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি অবস্থায় থাকা অতিথি ও স্টাফদের।
জঙ্গিদের হামলায় পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম, ওসি সালাউদ্দিনসহ ২২ জন নিহত হন। বাকি নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির নাগরিক, ৭ জন জাপানি, একজন ভারতীয় এবং একজন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। বাকি দুজন বাংলাদেশি নাগরিক। তারা হলেন ইশরাত আকন্দ ও ফারাজ আইয়াজ হোসেন।
হোলি আর্টিজানে হামলার পর দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানে নামে সিটিটিসি, র্যাবসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। এসব অভিযানে একে একে শীর্ষ জঙ্গিদের একটা বড় অংশ মারা যান। বাকিরা ধরা পড়েন।