পদ্মা সেতুর নাট খুলে ভিডিও ধারণ করার ঘটনায় গ্রেপ্তার মাহদি হাসান নামের যুবককে আদালতের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন লৌহজং উপজেলার পদ্মা সেতু উত্তর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম।
এর আগে বুধবার রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিট লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করে মাহদি হাসানকে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মানিক চন্দ্র দাশের আদালতে হাজির করা হয়। রিমান্ড ও জামিন আবেদন না থাকায় আদালত তাকে কারাগারে রাখার নির্দেশ দেয়।
পদ্মা সেতু উত্তর থানার এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মাহদির বিরুদ্ধে বুধবার রাতে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরে তার রিমান্ড চাওয়া হবে।’
পদ্মা সেতুকে বিতর্কিত করতে পরিকল্পিতভাবে রেঞ্জ দিয়ে নাট ঢিলা করে হাত দিয়ে খুলে মাহদি হাসান ও তার বন্ধুরা ভিডিও করে ফেসবুকে ছাড়েন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মাহদি হাসান তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে কবি নজরুল কলেজে ভর্তি হলেও তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।
‘পদ্মা সেতুকে হেয় করতে কিছু একটা করবে- আগের দিন রাতেই মাহদি তার দুই ইউটিউবার বন্ধুকে নিয়ে এমন একটি পরিকল্পনা করেন। ২৬ তারিখ পদ্মা সেতু সাধারণের জন্য খুলে দেয়ার দিন মাহদি ও তার দুই ইউটিউবার বন্ধু ভোররাতেই মোটরসাইকেলে করে মাওয়া প্রান্তে অবস্থান করেন। সেতু খুলে দেয়ার পরপরই সেতু পার হয়ে তারা অন্য প্রান্তে চলে যান এবং ফরিদপুরে গিয়ে কিছু সময় অবস্থান করেন।’
সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, ‘সকালে সেতুতে মানুষের ভিড় থাকায় তারা নাট খোলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। পরে দুপুরবেলায় তারা তিনজন আবার সেতুতে ফিরে আসেন এবং সুযোগ বুঝে সঙ্গে থাকা রেঞ্জ দিয়ে নাট খুলে ভিডিও তৈরি করেন। তার দুই ইউটিউবার বন্ধু সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। পরে যখন তারা বুঝতে পারেন যে এ জন্য সমালোচনা শুরু হয়েছে, তখন ভিডিও ডিলিট করে আত্মগোপনে চলে যান তারা।’
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ উঠে পড়েন মূল সেতুতে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরে তাদের সরিয়ে দেন। পরদিন সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর দিনের বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এরই ফাঁকে নাট খোলার ভিডিও করেন মো. বাইজীদ নামের যুবক। তা ভাইরাল হলে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ইতিমধ্যে তাকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে।
বাইজীদ ছাড়াও পদ্মা সেতুর নাট খোলার আরও একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ায়। যা মাহদি করেছেন বলে পুলিশের তদন্তে ধরা পড়ে। ২৭ বছর বয়সী মাহদি ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন। তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার রবনগরকান্দি গ্রামে। তার পিতা মনির হোসেন কাজী। পুলিশ মাহদির বন্ধুদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে।