নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আগামী নির্বাচন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে হওয়া নিয়ে সংসদে আপত্তি তুলেছেন বিরোধী দলগুলোর সদস্যরা। জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সরকার এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশ থেকে এক সুতাও সরবে না। কেননা আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে। আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনে যেমন অনেক দল যেমন ইভিএম নিয়ে আপত্তি করেছে তেমনি অনেকে পক্ষেও মত দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট পাসের আগে ইসি সচিবালয় খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ নিয়ে আনীত মঞ্জুরি দাবির ওপর আলোচনায় সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর সদস্যদের মধ্যে এ বিতর্ক হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি দলীয় সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। বিগত ১০ বছরে দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে একটা অনাস্থা তৈরি হয়েছে। এখন কমিশন নির্বাচন করে না; নির্বাচন করে স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসন, জননিরাপত্তা বিভাগ ও জনপ্রশাসনের ব্যক্তিরা। এখানে নির্বাচন কমিশনের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা বরং জনপ্রশাসন ও জননিরাপত্তা বিভাগে দিয়ে দেয়া হাক।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান ইসি বলছে যে ইভিএম-এর ভোট কক্ষে যে ডাকাত থাকে সেটি ধরাই বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে কমিশন কোনোভাবেই নির্বাচন সঠিক করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল ইভিএম চাচ্ছে না।
‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ৯৬ সালে যখন আন্দোলন করেছেন তখন তিনি বলেছেন যে আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তো আজকে বিএনপিকে ছাড়া কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে? পারবেন না। আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে কিভাবে নির্বাচনে আনবেন সেটিই বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আসতে হবে।’
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘দেশে মানুষ যদি ভোট দিতে না পারে, তার পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে না পারে, আগে থেকে যদি ব্যালটে বাক্স ভরা থাকে, দিনের ভোট যদি রাতে হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন দিয়ে কী হবে?
‘নির্বাচন যে এখন একটা মল্লযুদ্ধ তার বড় প্রমাণ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য। বর্তমান কমিশন শপথ নেয়ার পরপরই তিনি বলেছেন- জেলনস্কির মতো বিএনপিকে মাঠে থাকতে হবে। আরেক কমিশনার বলেছেন- মেশিনে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে গোপন কক্ষে ডাকাত ঢুকে থাকে। এই ডাকাত যে শুধু দলীয় ক্যাডার তা নয়; এর মধ্যে আছে পুলিশ এবং প্রশাসনও। আর এই ডাকাতদের যেভাবে পুরস্কৃত করা হয় তাতে বোঝা যায় ভবিষ্যতে ডাকাত আরও বাড়বে।’
‘একজন ডাকাতের উদাহরণ হেলালুদ্দিন সাহেব, যিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে সচিব ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে প্রাইজ পোস্টিং হিসেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়।
‘এভাবে যদি ডাকাতদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয় তাহলে এই দেশে নির্বাচন কোনোদিনও সুষ্ঠু হবে না।বিনাভোটে সংসদ গঠন চলতেই থাকবে।’
বিএনপির এই সদস্য বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোটে মাত্র একজন এমপির হুমকি-ধমকিই এই নির্বাচন কমিশন সহ্য করতে পারেনি। এতেই পরিষ্কার, আগামী জাতীয় নির্বাচন এই কমিশনের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। যে কমিশন একজন এমপিকে সামাল দিতে পারে না, সেই কমিশন কী করে ৩০০ এমপিকে সামাল দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করবে?’
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, নির্বাচন করে রাজনৈতিক দল। আমরা সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করলে ঘরে বসে নির্বাচন কমিশন কিছু করতে পারবে না। প্রকারান্তরে কোনো নির্বাচন কমিশন কোনোদিন স্বাধীন নয়। সব কমিশনই সরকারের মাধ্যমে গঠিত হয়, তারা সরকারের অধীনে কাজ করে। আইয়ুব খানের আমলে হয়েছে, জিয়াউর রহমানের আমলে হয়েছে, আমাদের আমলে হয়েছে, এখনও হচ্ছে। এটা চলতেই থাকবে।’
ফিরোজ রশীদ বলেন, নির্বাচনের সময় যার শক্তি ও ক্ষমতা বেশি তাকে কোন কিছু করে রোধ করা যায় না। লোকান প্রশাসন যেদিকে শক্তি দেখে সেদিকে চলে যায়। সমক্ষক লোক নির্বাচনে এলে ভোট সঠিক হবে। কমিশন দিয়ে কিছু হবে না। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক না থাকলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দায় শুধু কমিশনের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে হবে না।’
মো. রস্তুম আলী ফরাজী বলেন, যার কাজ তাকে করতে দিতে হবে। আর একজনকে দিয়ে তো কাজ করানো যাবে না। ইলেকশন কমিশনের দায়িত্বই হচ্ছে নির্বাচন পরিচালনা করা। নির্বাচন সঠিক হতে হবে, ফেয়ার হতে হবে। নানা ব্যাপারে প্রশ্ন থাকতেই পারে।
‘ডিজিটাল যুগে ইভিএম-এর দোষ নেই। পেছনে যদি কেউ থাকে সেটা দেখতে হবে। ইভিএম-এ না হয়ে ব্যালটে নির্বাচন হলেও তো কেউ না কেউ প্রভাব ফেলতে পারে। প্রভাব খাটানো বন্ধ করতে হবে। প্রযুক্তিগতভাবে নির্বাচন হলে সেখানে গ্যাঞ্জাম কম হবে, সন্ত্রাস কম হবে।’