সাভারের আশুলিয়ায় যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে হত্যার ঘটনায় তোলপাড়, সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুমোদন ছাড়াই মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শাখা পরিচালনার তথ্য মিলেছে।
হাজি ইউনুছ আলী কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য উচ্চ মাধ্যমিক ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অনুমোদন না থাকার কথা স্বীকার করে বলেছে, কেবল কলেজ চালিয়ে খরচ তোলা সম্ভব নয়। এ কারণে তারা স্কুল চালান।
প্রাথমিকের অনুমোদন থাকার বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও এর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক বলেছেন, এই দাবির ভিত্তি নেই।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, প্রাইমারি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কিন্ডারগার্টেন হিসেবেই এতদিন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে এসেছে কর্তৃপক্ষ। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন শেষে বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন ছিল না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজি ইউনুছ আলী কলেজ পরিদর্শন করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মনোয়ার হোসেন।
তবে সাভার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুন্নাহার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুলের প্রাইমারি সেকশন ও কলেজটা অনুমোদিত। কিন্তু হাইস্কুলটা সরকার অনুমোদিত না।’
কীভাবে এতদিন ধরে উচ্চ মাধ্যমিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হাইস্কুলে সাভারে প্রচুর কিন্ডারগার্টেন স্কুল চলছে। এরা কিন্ডারগার্টেন সিস্টেমে স্কুলে পড়াচ্ছে। সিক্স টু টেন যেটা, সেটা হচ্ছে কিন্ডারগার্টেন।‘
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিনটা ব্যাপার এখানে আমরা পেয়েছি। এখানে শিশু শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় ফিজিক্যালি। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি আছে। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমোদন তাদের নেই।
‘প্রাইমারি সেকশনের একটা অনুমতি আছে বলে তারা দাবি করেছেন এবং একটা কোড নাম্বার আমাদের দেখিয়েছেন। কিন্তু এর সাপোর্টিংয়ে তারা কোনো অথেনটিক কাগজপত্র বা অফিশিয়াল চিঠিপত্র আমাদের দেখাতে পারেননি।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার তথ্যের বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘উনি কীভাবে বলছেন সেটার ব্যাখ্যা তিনিই দিতে পারবেন।’
হাজি ইউনুছ আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান তাদের মাধ্যমিক শাখার অনুমোদন না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাইমারির বিষয়টা অনুমোদিত। ওটার ইএমএস নম্বরটাও দিয়েছি। ওই নম্বরে অনলাইনে ডিটেইলসটা পাওয়া যাবে।
‘আর এই এলাকায় হাইস্কুলগুলো এভাবেই পরিচালিত হয়। অন্য কোনো একটা স্কুলের মাধ্যমে নিবন্ধন করা হয়। এখানে পাঠদান করা হলেও পরীক্ষার সময় কেন্দ্রটা চেঞ্জ করি আমরা। যেহেতু সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত আমাদের অনুমোদন নেই। তারা বলেছে এটা চালাচ্ছেন কেন? আমরা বলছি, স্যার যেহেতু আমাদের এখানে ৫০ জনের মতো তরুণ শিক্ষক আছে। শুধু কলেজ চালিয়ে তাদের বেতন দেয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা হাইস্কুল চালিয়েছি।’
গত শনিবার কলেজ প্রাঙ্গণে মেয়েদের ক্রিকেট খেলার সময় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে জখম করে বলে অভিযোগ আছে। পরদিন সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উৎপলের মৃত্যু হয়।
একই দিন নিহতের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় মামলা করেন।