গেলো দুই দিন ধরে অনেকটা স্থবিরতা নেমে এসেছে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরি ঘাটে। গত ২৬ মের পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে ফেরি বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিসি।
অন্যদিকে পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে বাংলাবাজার ঘাটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচলেও নেমে এসেছে স্থবিরতা। সেতু উদ্বোধনের পর থেকে দুই দিনে কয়েকটি লঞ্চ ও স্পিডবোট চলেছে পদ্মা নদীতে।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন বলেন, ‘২৬ মের পর থেকে বাংলাবাজার ঘাটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধই থাকবে। তবে শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি ঘাটে দুটি ফেরি চালু করা হয়েছে। আর সব ঘাটেই লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল রয়েছে। কেউ লঞ্চ স্পিডবোট না চালালে সেটা মালিক পক্ষের বিষয়। মাঝিরকান্দি ঘাট দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার হচ্ছে। তবে ফেরি মাত্র দুটি থাকায় কিছুটা সময় লাগছে।’
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি, সেতুতে দুর্ঘটনায় দুই বাইক আরোহীর মৃত্যুসহ বিভিন্ন কারণেই সোমবার ভোর থেকে সেতুতে বাইক পারাপার বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে বিপাকে পড়েন বাইকাররা।
মাদারীপুরের বাংলাবাজার লঞ্চ ঘাটে চলছে দিকে এক দুটি লঞ্চ। ছবি: নিউজবাংলা
অনেকে রাতে জাজিরা প্রান্তে ঘুরতে গিয়ে সকালে মাওয়া পাড়ে ফিরতে পারেননি সেতুর ওপর দিয়ে। তারা নিয়মমাফিক মোটরসাইকেল চালানোর দাবি করেন। পরে অনেকেই বিকল্প রুট হিসেবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট ব্যবহার করছেন।
বরিশাল থেকে আসা বাইকার মনিরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের টাকায় আমাদের সেতু হলেও তার সুফল পাচ্ছি না। সকাল ৬টায় জাজিরা টোল প্লাজায় এসে তিন ঘণ্টা দেরি করেও কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে দৌলতদিয়া হয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। এটা না হয়ে কঠোর নিয়মনীতি মেনে মোটরসাইকেলসহ যাবতীয় যানবাহন চালানোর অনুরোধ রইল। এতে আমরা দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা পাব।’
বাংলাবাজার ঘাটের স্পিডবোট মালিক সমিতির পরিচালক রাসেল মিয়া বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর আামদের সি-বোট বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা। কেউ ঘাটে আসছেন না। গত দুই দিনে ১৫ থেকে ২০টি সি-বোট চলাচল করেছে। এতে তেলের টাকাও হয় না। ফলে সি-বোট চালু রাখার কথা বললেও কার্যত আমাদের বন্ধ রাখতে হবে।
‘কারণ মানুষ না হলে আমরা কীভাবে এগুলো চালাব। তাই সরকারিভাবে চালানোর কথা থাকলেও আমরা বন্ধ করে রাখতে বাধ্য থাকব।’
বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ঘাটের লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি আতাহার বেপারী বলেন, ‘আমাদের দিকে আর কেউ তাকায় না। সেতু চালু হয়েছে, এতে আমরা খুশি, কিন্তু কীভাবে লঞ্চ চলবে যদি না যাত্রী আসে? দুই দিন কোন যাত্রীই ছিল না।
‘৫ থেকে ৭টি লঞ্চ আসা-যাওয়া করলেও তেলের পয়সা হবে না। তাই বাধ্য হয়েই লঞ্চ বন্ধ রাখতে হবে। এ রুটে প্রায় ৮৭টি লঞ্চ রয়েছে। এভাবে বন্ধ থাকলে আমাদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লঞ্চ অন্য রুটে চালানোর ব্যবস্থা করা হোক, না হলে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হোক। এটা করা না হলে লঞ্চের সাথে জড়িত প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারকে পথে বসতে হবে। আর অনেক লঞ্চ মালিক আছেন, যাদের লঞ্চ নষ্ট হলে ভিখারি হয়ে যেতে হবে।’
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার ঘাটের পরিবহন পরিদর্শক আখতার হোসেন বলেন, ‘আমাদের লঞ্চ বন্ধ হওয়ার কোনো সংবাদ নেই। যদি মালিকরা লঞ্চ চালায়, তাহলে আমরা দায়িত্ব পালন করব, এর বাইরে কিছু বলতে পারছি না। আমি প্রতিদিনই ঘাটে অবস্থান করছি।’
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে আগে ৮৭টি লঞ্চ, দেড় শতাধিক স্পিডবোট আর ১৭টি ফেরি নিয়মিত চলাচল করত। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে গেল এক মাস ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিকল্প রুট হিসেবে শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি ঘাট দিয়ে তিন থেকে পাঁচটি ফেরি চলাচল করত।’