বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম দ্বিতল সেতু পদ্মা

  •    
  • ২৫ জুন, ২০২২ ১৬:১৯

এত দিন ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে লম্বা দোতলা সেতুর তকমা ছিল আসামের বগিবিল সেতুর। শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সেই গৌরব এখন বাংলাদেশের। পাকিস্তানের দীর্ঘতম সেতু মালির রিভার ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যদেশ শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটানে উল্লেখযোগ্য কোনো দোতলা সেতু নেই। এই দেশগুলোর সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতুর দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটারের নিচে।

দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম দোতলা সেতু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পদ্মা সেতু। এত দিন ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে লম্বা দ্বিতল সেতুর তকমা ছিল আসামের বগিবিল সেতুর।

৪ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বগিবিল সেতুটিতে একসঙ্গে রেল ও গাড়ি চলাচল করে।

আসামের ডিব্রুগড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর তৈরি করা হয় সেতুটি। এটি ভারতের দীর্ঘতম দোতলা সেতু। ২০১৮ সালে সেতুটি উদ্বোধন করে কয়েক মিনিট সেখানে হেঁটে বেড়ান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

অন্যদিকে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের ভায়াডাক্ট বা সংযোগ সেতু মিলিয়ে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার।

শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দুপুর ১২টার একটু আগে মাওয়া প্রান্তে ফলক উন্মোচন করে প্রধানমন্ত্রী গাড়িতে চড়ে যান সেতুর জাজিরা প্রান্তে। এই সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয় ৩ হাজার ১৯৩ হাজার কোটি টাকা। উদ্বোধনের পরের দিন দ্বিতল এই সেতুর ওপর দিয়ে চার লেনে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।

আসামের ডিব্রুগড় থেকে অরুণাচলের ধেমরাজীকে সংযুক্তকারী এই সেতুটি তৈরি করতে খরচ হয় ৫ হাজার ৯০০ কোটি রুপি। ১২০ বছর মেয়াদি এই সেতুটির প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছিল ৩ হাজার কোটি রুপি। পরে এর খরচ ৮৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের দীর্ঘতম সেতু মালির রিভার ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। ২০০৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হওয়া এই সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল ১২ কোটি রুপি। দেশটিতে উল্লেখযোগ্য কোনো রোড-কাম-রেল সড়ক নেই। শাহ ফয়সাল শহরের সঙ্গে করোঙ্গি, লানধিকে সংযুক্তকারী এই সেতুটি বর্তমান অবস্থা নাজুক। ২০১৬ সালে এই সেতুটি মেরামতের অংশ হিসেবে কয়েক সপ্তাহ বন্ধ থাকে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যদেশ শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটানে উল্লেখযোগ্য কোনো দোতলা সেতু নেই। এই দেশগুলোর সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতুর দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটারের নিচে।

১৯৯৮ সালে বগিবিল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। ২০০২ সালে রেলের ছাড়পত্র পাওয়ার পরই নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। সেতুটি তৈরি করতে ২১ বছর সময় লাগে।

আধুনিক স্থাপত্য ও প্রযুক্তির মিশেলে ব্রহ্মপুত্রের ওপর তৈরি করা হয় বগিবিল সেতু। দোতলা এই সেতুর ওপরের তলা দিয়ে চলে বাস, লরি, ট্রাকসহ বিভিন্ন যান; আর নিচ দিয়ে চলাচল করে ট্রেন।

দোতলা পদ্মা সেতু ও বগিবিল সেতুর নকশায় কিছুটা মিল থাকলেও এদের নির্মাণ ব্যয় ও অর্থনৈতিক গুরুত্বে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের প্রমাণ: ভারত

মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর সফল উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রমাণ দেয়।

পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সফলভাবে শেষ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভারত সরকার ও জনগণের পক্ষে অভিনন্দন বার্তা দিয়েছে ভারতের দূতাবাস।

অভিনন্দন বার্তায় পদ্মা সেতুকে যুগান্তকারী অবকাঠামো উল্লেখ করে ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, বহুল প্রতীক্ষিত এই মেগা প্রকল্পের সফল উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রমাণ দেয়।

‘এই সাফল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক সিদ্ধান্তের প্রমাণ দেয়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ যখন এই প্রকল্পটিকে এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন আমরা একে অবিচলভাবে সমর্থন জানিয়েছি,’ বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে।

বলা হয়, ‘পদ্মা সেতু শুধু আন্ত বাংলাদেশ যোগাযোগকেই উন্নত করবে না, এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার অভিন্ন অঞ্চলগুলোকে সংযুক্ত করা ও বাণিজ্য বাড়াতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা দেবে। সেতুটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক সংযোগ বাড়াতে জোরালো ভূমিকা রাখবে।’

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অসাধারণ অনন্য এক স্থাপনা

পদ্মা সেতু শুধু একটি যোগাযোগের বড় মাধ্যম নয়, এটা এক আবেগ ও ভালোবাসারও নাম। এটা টেকনিক্যালই চ্যালেঞ্জিং ছিল বাংলাদেশের জন্য। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও বটে।

এ এলাকার ভৌগোলিক অবস্থাও একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে দেশে রূপান্তরকামী একটা চেতনা। বলতে পারি, পদ্মা সেতু দেশ রূপান্তরকারী একটি প্রকল্প, এটা এখন সক্ষমতার প্রতীক, এমনটি বলেন বুয়েটের অধ্যাপক ও যোগযোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. সামছুল হক।

তিনি বলেন আমাদের একটা প্রবণতা ছিল- কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দাতাদের দিকে তাকিয়ে থাকা। এ প্রকল্পে কিন্তু সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি বলে মনে হয়। প্রযুক্তিগতভাবে আমরা কতটা এগিয়েছি সেটার পরিচয়ও সেতুটি বহন করে।

অবকাঠামোগতভাবে এটা বাংলাদেশের জন্য এক অসাধারণ অনন্য স্থাপনা।

যেসব স্থাপনায় রড ব্যবহৃত হয় সেখানে পানি পেলে রড ফুলে যায় এবং ক্ষয় হতে থাকে, সঙ্গে থাকা অন্য উপাদানেরও ক্ষতি করে থাকে। সে জন্য সেগুলোর স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে মোটামুটি ১০০ বছর ধরা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যারা পদ্মা সেতুতে প্রয়োগ করা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে সেখান থেকে জানা জানা যায়, এর স্থায়িত্ব ১০০ বছরের বেশি।

সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এ ব্রিজের মধ্যে যে উন্নত ইলোকট্রনিক প্রযুক্তির মনিটরিং সেল ও সেল্ফ সেন্সর রয়েছে সেটি জানান দেবে এ স্থাপনাটির স্বাস্থ্যগত কোনো পরিবর্তন ঘটছে কি না। কোন জায়গায় কতটুকু চাপে আছে? ভূমিকম্প বা অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোনো নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে কি না তা জানান দেবে। সংগত কারণেই এটার নির্মাণকৌশল ও প্রযুক্তিগত কারণে একে টেকসই করার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখেবে। সব মিলিয়ে বলতে পারি এবং আমার বিশ্বাস, যে প্রযুক্তি ও কৌশল পদ্মা সেতুতে প্রয়োগ করা হলো- তাতে এর স্থায়িত্ব ১০০ বছরের বেশি হবে।

এ বিভাগের আরো খবর