ধরা যাক দ্বিতল পদ্মা সেতুর রেলপথে ছুটছে ভারী ট্রেন। আর সড়কে পণ্যবোঝাই ট্রাকের সারি। এমন সময় হুট করে শুরু হলো ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্পে সেতুর পিলারের আশপাশে ৬২ মিটার মাটি সরে গেল। ঠিক এমন সময় চার হাজার টনের একটি জাহাজ ধাক্কা দিল সেতুর কোনো এক পিলারে।
এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে কী ঘটবে?
প্রকৌশল বিদ্যা বলছে, তখনও অটল দাঁড়িয়ে থাকবে বাংলাদেশের গর্বের পদ্মা সেতু।
পদ্মা সেতু কতটা শক্তিশালী, সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রকৌশলগত নিরাপত্তার চারটি স্তর তুলে ধরে এমন তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। ২০২১ সালের ২৬ জুলাই মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে তিনি এ তথ্য জানান।
পদ্মা সেতুর শক্তিমত্তার প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে ওই বছরের ২৩ জুলাই একটি দুর্ঘটনার সূত্র ধরে। ওইদিন ‘শাহজালাল’ নামের একটি রো রো ফেরি সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা মারে। এতে ফেরিটির সামনের অংশ দুমড়ে যায়। আহত হন অন্তত ২০ যাত্রী।
এ প্রসঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণকৌশল নিয়ে কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। জানান, চারটি প্রকৌশলগত নিরাপত্তা যুক্ত করে এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘যদি কখনও রিখটার স্কেলের আট মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তখন যদি পিলারের নিচ থেকে ৬২ মিটার মাটি সরে যায়, মাটি সরে গেলে কিন্তু স্ট্রেংথ কমে যাবে।
‘তখন যদি ব্রিজের দুটি লেয়ারের নিচেরটি হেভি লোডেড ট্রেন দিয়ে বোঝাই থাকে, আর ওপরেরটিতে যদি লরি দিয়ে বোঝাই থাকে, তখনই যদি চার হাজার টনের একটি শিপ গিয়ে পিয়ারের মধ্যে ধাক্কা মারে, তবুও ব্রিজের, পিলারের কিছু হবে না। ডু্ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড? এগুলো হলো ইঞ্জিনিয়ারিং সেফটি।’
তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘প্রকৃতি যদি এর বাইরে কিছু করে, দ্যাটস আ ডিফারেন্ট থিং।’
পদ্মা সেতুর প্রকৌশলগত দিক নিয়ে সম্প্রতি নিউজবাংলার কথা হয়েছে প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে ডিজাইনটা করা হয়েছে, সেখানে দুই-তিনটা ক্রাইটেরিয়া রয়েছে। যখন আমরা নেভিগেশন ঠিক করি, তখন গ্লোবাল ওয়ার্মিং বিবেচনা করেছি। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ে পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে। আমরা এখন ১৮ মিটার বলছি, পরবর্তী সময়ে এটা হয়তো থাকবে না। সে জন্য আমরা আরও ৩০০ মিলিমিটার বাড়িয়ে ধরেছি, যাতে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ে আমাদের সমস্যা না হয়।’
পদ্মা একটি সচল নদী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক নৌযান চলাচল করে। তো সেগুলো অনেক সময় ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুতে ধাক্কা দিতে পারে। এসব ধাক্কা যাতে সেতু সহ্য করতে পারে সে বিষয়টাও ঠিক রাখা হয়েছে। জাহাজের ধাক্কা লাগলেও যাতে ব্রিজের ক্ষতি না হয় ডিজাইনটা সেভাবে করা হয়েছে।’
১২০ মিটার গভীর যে পাইল করা হয়েছে তার মধ্যে ৬২ মিটার এখনকার জন্য অদরকারি বলেও জানান শফিকুল। তিনি বলেন, ‘আবার এটা ছাড়া উপায়ও নেই। কারণ এমন হতে পারে পাইলের পাশ থেকে হঠাৎ মাটি সরে গেল। তখন কী হবে, বিয়ারিং কমে যাবে। যাতে বাকিটায় নিতে পারে সে জন্য এত বড় পাইল করা হয়েছে, কারণ নিচে তো হার্ড বেল্ট নেই।’