বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলেটের বন্যার জন্য দায়ী কিশোরগঞ্জের সড়ক: বিএনপি

  •    
  • ২২ জুন, ২০২২ ২৩:৫৩

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর দাবি, এই বন্যা মানবসৃষ্ট। এর জন্য দায়ী কিশোরগঞ্জের হাওরে নির্মিত ইটনা-মিটামাইন সড়ক। সড়কটি রাষ্ট্রপতির বাড়ি যাওয়ার জন্য ৮৭৫ কোটি টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। এর কারণে উত্তরপূর্বাঞ্চলের মানুষকে হাবুডুবু খেতে হচ্ছে।

সিলেট, সুনামগঞ্জে বন্যায় হাওরে নির্মিত ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ককে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছুদিন থেকেই আলোচনা তুঙ্গে। অবশ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই সড়ক এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে এমন ঢল ও বানের পানি নামতে কোনো বাধা পায় না। সেখানে যে পানিপ্রবাহ, ঠিক সে দিকেই রাস্তাটি নির্মিত।

কেবল এবারই নয়, গত বৈশাখে সুনামগঞ্জে অকাল বন্যায়ও এই সড়কটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছিল। তবে সে সময় সড়কের ১০ কিলোমিটারের আশপাশেও পানি ছিল না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, সিলেট থেকে নেমে আসা পানি যেদিক দিয়ে নামে তার বিপরীত দিকে সড়কটির অবস্থান। সিলেটের পানি নামে ধনু নদী দিয়ে। এটিই সিলেটে সুরমা নদী। এ নদীর দক্ষিণে সড়কটির অবস্থান।

এই সড়কের পুরো ৩০ কিলোমিটারের যে তিনটি নদী রয়েছে সেগুলোতেও বড় আকারের তিনটি সেতুসহ অনেক বক্স কালভার্ট রয়েছে।

এবার সেই সড়ককেই সিলেট ডোবার কারণ বলে দাবি করেছে বিএনপি। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর দাবি, এই বন্যা মানবসৃষ্ট। এর জন্য দায়ী কিশোরগঞ্জের হাওরে নির্মিত ইটনা-মিটামাইন সড়ক। সড়কটি রাষ্ট্রপতির বাড়ি যাওয়ার জন্য ৮৭৫ কোটি টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। এর কারণে উত্তরপূর্বাঞ্চলের মানুষকে হাবুডুবু খেতে হচ্ছে।

বুধবার বিকেলে সিলেট নগরের একটি হোটেলে বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এমন অভিযোগ করেন আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘এই সড়কের কারণে ঢলের পানি হাওর থেকে নদীতে নামতে বাধা পাচ্ছে। ভুল সড়ক, বাঁধ ও অবকাঠামো নির্মাণের প্রতিক্রিয়ায় পানি নামতে পারছে না। তাই সহনশীল বন্যা দুঃসহ হয়ে উঠেছে।’

সিলেট সফরকালে বন্যায় বিএনপির কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ওই সংবাদ সম্মেলনে করে বিএনপি।

এর আগে বন্যার ভয়াবহতা দেখতে মঙ্গলবার সকালে সিলেট যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিলেটে তিনি জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এ সময় সিলেট সিটি মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীকে বক্তব্যে ডাকার আগ মূহূর্তে প্রধানমন্ত্রী ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, ‘আজকে তো বিএনপির কেউ আসেনি। একমাত্র মেয়র সাহেবই এসেছেন। তিনি বলুক, তার দল আজ কোথায়? দুর্গতদের জন্য তারা কী করেছে?’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে আহূত হয় বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটের মানুষ যখন অসহায় হয়ে নিরব কান্না করছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন পানি ডিঙ্গিয়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি বন্যায় বিএনপির কর্মতৎপরতা নিয়ে ঠাট্টা করছেন।’

কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটে বন্যার শুরু থেকেই বিএনপি, অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচার হচ্ছে। কিন্তু তারপরও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি আমাদের তৎপরতা নিয়ে উপহাস করছেন। শুরু থেকেই আমরা বানবাসিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়রম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সবাই সিলেটবাসীর খবর নিচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১৩টি উপজেলার ৩৬ হাজার ২০০ পরিবারকে শুকনো খাবার, ১ লাখ ৯৩ হাজার জনকে তৈরি করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং ১১ হাজার ৩০০ পরিবারকে নগদ অর্থ দিয়েছি। আগামীতে তা আরও বাড়বে। তারপরও যখন প্রধানমন্ত্রী আমাদের কার্যক্রম দেখেন না, তখন তা দেখার দায়িত্ব সিলেটবাসীর কাছে ছেড়ে দিলাম।’

হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির বিষয়ে কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘২০১৭ সালে হাওরের বাঁধ ভাঙার জন্য অনিয়ম আর ঠিকাদারদের দুর্নীতির কথা উঠে এসেছিল। এবার এসব ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ।’

সিলেটের জলপ্রবাহের ওপর কী কী অনাচার হচ্ছে, তার তালিকা করার দাবি জানান তিনি।

বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ক্ষতির পরিমাণ সরকারিভাবে দেয়া হিসাবের চেয়ে আরও ভয়াবহ। সাম্প্রতিক বন্যায় এ পর্যন্ত ২৩ জনের প্রাণহানী হয়েছে। আর কত প্রাণহানী হলে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে? অবিলম্বে দুর্গতদের দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য সহায়তা দিন, পুণর্বাসন করুন। মানবসৃষ্ট বন্যার কারণ খুঁজুন ও মুক্তির জন্য নদী ড্রেজিংসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’

সিলেটে ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিজেদের দুর্নীতি ঢাকতে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে নেতারা শ শ কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। এখন সিলেটকে বিক্রি করে তারা মেগা প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের পাঁয়তারা করছেন। দেশের একটি বৃহত্তর অঞ্চল যখন পানির নিচে, তখন সরকার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশি শিল্পী এনে অনুষ্ঠানের নামে পানিবন্দি মানুষদের সাথে উপহাস করছে। জনগণ সময়মত এর দাঁতভাঙা জবাব দেবে।’

সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপি নেতা, শামীম আহমদ, অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন, মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়ছল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর