বাবার কারণে আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছেন জানিয়ে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেছেন, তাকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে আপ্লুত হয়ে যান আবেগে।
বাবা দিবস উপলক্ষে রোববার রাতে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনের গ্র্যান্ড বল রুমে ‘ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড গর্বিত বাবা অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সন্তানকে যোগ্য করে গড়ে তোলার স্বীকৃতি হিসেবে দেশে প্রথমবারের মতো ‘গর্বিত বাবা অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয় ২৫ জনকে। গর্বিত বাবা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এ সম্মাননা দেয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন গর্বিত বাবা ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি মেহেদী হাসান। সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি দিলীপ কুমার আগারওয়ালা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এতে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ ও নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ।
অনুষ্ঠানে চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বাবা প্রয়াত সরাফাত হোসেন চৌধুরীকে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড গর্বিত বাবা অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়।
বাবার পক্ষে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করে স্মৃতিচারণা করেন পদ্মা ব্যাংক চেয়ারম্যান।
অনুষ্ঠানে বাবার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। ছবি: নিউজবাংলাতিনি বলেন, ‘অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে প্রত্যেকের বাবা এখানে উপস্থিত হয়েছেন, কিন্তু আমার বাবা আসতে পারেননি। আমার বাবার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।
‘২০১১ সালে আমার বাবা মৃত্যুবরণ করেন। আমি বাবা নিয়ে কিছু বলতে পারি না, আবেগে আপ্লুত হয়ে যাই। আজকে এই সম্মানটা আমার বাবার জন্য। আমরা সন্তানেরা এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি শুধু বাবার জন্য।’
শৈশবের স্মৃতিচারণা করে বিশিষ্ট এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কলারশিপের ব্যবস্থা ছিল। আমি স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। প্রতিষ্ঠান প্রিন্সিপাল স্কলারশিপের টাকা আমার হাতে তুলে দেন। সেই টাকা আমি আমার আব্বুর কাছে তুলে দেই। সেই সময়কার রাষ্ট্রপতি ছিলেন আমার বাবার বন্ধু।
‘আমার বাবা তার সঙ্গে নাশতায় যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাবা তার রাষ্ট্রপতি বন্ধুর কাছে বলছিলেন, আমার ছেলে স্কলারশিপের টাকাটা আমার হাতে তুলে দিয়েছে। সেই টাকাটা বাবার পকেটে ছিল তখন।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। ছবি: নিউজবাংলাতিনি বলেন, ‘বাবার সেই হাসিখুশি চেহারাটা আমার এখনও মনে পড়ে। সন্তান মায়ের গর্ভে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন বাবা। তা-ই হচ্ছে বাবাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর স্বাগত বক্তব্য দেন গর্বিত বাবা ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং ড্যাড’ এবং ‘বাবাকে জানো’ প্রোগ্রাম চালু থাকবে। ‘বাবা’ নামে একটি ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন বের করা হবে, যেখানে থাকবে ছবি, চিত্রকলা, স্মৃতিকথা, ছোট গল্প ও কবিতা।
মেহেদী বলেন, সংগঠনটির বড় একটি স্বপ্ন আছে। একটি ‘আনন্দ আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। বৃদ্ধ বাবারা যাতে শেষ দিনগুলো সুন্দরভাবে, আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করতে পারে, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে।
অনুষ্ঠানে প্রত্যেক বাবা তার সন্তান ও পরিবারকে নিয়ে আলাদাভাবে বাবা দিবসের কেক কাটেন।
উপস্থাপক শান্তা জাহানের সঞ্চালনায় বাবাদের হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। পুরস্কারপ্রাপ্তদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন বিশেষ অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে গর্বিত বাবা ফাউন্ডেশনের সভাপতি দিলীপ কুমার আগারওয়ালা বলেন, ‘আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন; সমর্থন দিন। এই সংগঠনকে আমরা অনেক দূর নিয়ে যাব।’
যারা পেলেন গর্বিত বাবা অ্যাওয়ার্ড
ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বাবা সরাফাত হোসেন চৌধুরীকে বিশেষ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন দিলীপ কুমার আগারওয়ালার বাবা অমিয় কুমার আগারওয়ালা, সামাউন আহমেদ মৌসুমীর বাবা বশির আহমেদ, কাওসার আহমেদের বাবা আলী আকবর, সালাউদ্দিন চৌধুরীর বাবা আব্দুল আজিজ চৌধুরী, শিল্পী হাবিব ওয়াহিদের গায়ক বাবা ফেরদৌস ওয়াহিদ, অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা সাহা মিমের বাবা বীরেন্দ্র নাথ সাহা, অভিনেতা বাপ্পি চৌধুরীর বাবা ননী গোপাল সাহা, ড. গোলাম মাহমুদর রায়হানের বাবা আতাউর রহমান, কিশোর কুমার দাসের বাবা হরিপদ দাস, ক্রিকেটার ও এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার বাবা গোলাম মোর্ত্তজা, সাংবাদিক জ ই মামুনের বাবা গাজী আবদুল লতিফ, ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদির বাবা নাসির উদ্দিন সাথী, অমিত কুমার পাল ও মৃনাল কুমার পালের বাবা উত্তম কুমার পাল, শরিফা চৌধুরীর বাবা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল মামুনের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন, ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের বাবা আজিজুল হক, ভাস্কর শাকিল আহমেদ ও প্রকৌশলী শাহরিয়ার আহমেদ শিল্পীর বাবা সিরাজউদ্দিন আহমেদ, কণ্ঠশিল্পী দিলশাদ নাহার কনার বাবা দৌলত উল্লাহ, আবু সায়েমের বাবা আলমগীর হোসেন, রুকন উল হাসানের বাবা নজরউদ্দিন, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হাশেম মিয়া, অভিনেতা তাহসান রহমান খানের বাবা সানাউর রহমান খান, অভিনেতা সিয়াম আহমেদের বাবা অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন আহমেদ, নির্মাতা রেদওয়ান রনির বাবা রজব আলী।