মৌসুমের স্বাভাবিক বন্যায় ডুবছে দেশের উত্তরাঞ্চল। সেসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে না, বরং বন্যা সর্বোচ্চ অবস্থানে ওঠার পাঁচ ছয় দিনের মধ্যে নেমে যাবে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)।
উত্তরাঞ্চলে তিস্তার পানি বেড়ে কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধার বেশ কিছু এলাকা ডুবে গেছে।
এফএফডব্লিউসি জানায়, এখন পর্যন্ত দেশে বন্যা আক্রান্ত জেলা ১১টি। এসব এলাকায় ৯টি নদীর ১৮টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সংস্থাটি বলছে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণাধীন পানির সমতল স্টেশন ১০৯টির মধ্যে ৭৮টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, কমেছে ২৬টিতে এবং অপরিবর্তিত আছে দুটিতে।
তারা জানায়, এত অল্প সময়ে অধিক বৃষ্টি জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের বন্যা মৌসুমের স্বাভাবিক বন্যা। এখানে বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে না। উত্তরাঞ্চলের বন্যা এখন সর্বোচ্চ অবস্থানে ওঠার পর পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে নেমে যাবে। সর্বোচ্চ অবস্থানে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত করতে থাকবে। এর পরে পানি নেমে যাবে। উত্তরাঞ্চলের বন্যায় টাঙ্গাইল পর্যন্ত প্লাবিত হবে।’
দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের বন্যার আশঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি এত দ্রুত বলা মুশকিল। তবে দক্ষিণ অঞ্চলে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য বড় ধরনের কোনো ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা নেই। নরমাল অবস্থায় থাকবে।’
সিলেট ও সুনামগঞ্জে এবারের বন্যার যে ধাক্কা গত ২০-২৫ বছর এমন হয়নি বলেও জানান এই প্রকৌশলী।
এমন বন্যার জন্য মূল কারণ হিসেবে ভারতের মেঘালয়, আসামে অতিমাত্রার বৃষ্টি ও ঢলকে দায়ী করেন তিনি।
আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমান বন্যার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে পরপর তিন দিনে প্রায় ২৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যা উজানে নামছে। যেখানে আমাদের দেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত হচ্ছে ২৩০০ মিলিমিটার। এত বেশি পানি বাংলাদেশের ভেতরে এসে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এবারের বন্যার এটাই মূল কারণ। এত অল্প সময়ে এত বৃষ্টি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
নদনদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস
দেশের সব প্রধান নদনদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের স্থানসমূহে মাঝারি থেকে ভারি এবং কোথাও কোথাও অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সব প্রধান নদনদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার কাছাকাছি অথবা ওপরে অবস্থান করতে পারে।
এ ছাড়া লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে আগামী ২৪ ঘণ্টায়।
নতুন করে প্লাবিত হতে পারে টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চল।