দেশের পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং নেত্রকোণা জেলায় পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় বিঘ্নিত হয় বেশ কিছু মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্ক। এসব এলাকায় ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছে মোবাইল নেটওয়ার্ক।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) রোববার জানিয়েছে, এসব এলাকায় ১ হাজার ১৫৯টি সাইট বা টাওয়ার বন্যায় বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার পর্যন্ত এর মধ্যে ১৫৭টি সাইট চালু করা সম্ভব হয়েছে।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বিটিআরসি জানায়, তাদের মনিটরিং টিম এবং অপারেটরগুলোর কর্মীরা সবগুলো সাইট সচলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
বন্যাদুর্গত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সচলে অপারেটরগুলোর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবশেষ অবস্থা জানিয়েছে দেশের মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব।
অ্যামটব বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় ওইসব স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে সেসব এলাকায় জেনারেটর দিয়ে নেটওয়ার্ক চালু রাখার চেষ্টা করছে মোবাইল সেবাদাতারা। তবে সড়ক যোগাযোগের পরিস্থিতি বিঘ্নিত হওয়ায় সাইটগুলোতে জেনারেটর পৌঁছানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সাইটগুলোতে জেনারেটরের তেল পৌঁছানোও দুষ্কর হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সহযোগিতায় মোবাইল অপারেটররা টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সংগঠনটি জানায়, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার প্রায় ৪৫ শতাংশ সাইট এখনও ডাউন। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে গ্রাহকেরা অনেক ক্ষেত্রে মোবাইলেও চার্জ দিতে পারছেন না।
গত শুক্রবার থেকে ওই তিন জেলার জন্য বেশকিছু টোল-ফ্রি নম্বর চালু করা হয়েছে, যেসব নম্বরে কথা বলতে গ্রাহকদের কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না।
বিটিআরসির মনিটরিং টিম
দেশে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দুর্গত এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতে বিটিআরসি একটি শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠন করেছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের তত্ত্বাবধানে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের একজন পরিচালকের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও শাখাগুলোর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে উক্ত সেল বন্যাদুর্গত এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্ক, অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও ব্যান্ডউইথ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
বর্তমানে বন্যাদুর্গত এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কার্যক্রমকে সহজতর করার লক্ষে বিটিআরসির উদ্যোগে টোল ফ্রি নাম্বার চালু করা হয়েছে।
এ ছাড়া এই কার্যক্রমকে অধিক সহজ করতে কমিশন থেকে ২০টি মোবাইল হ্যান্ডসেট সরবরাহ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সুনামগঞ্জ, সিলেট এবং নেত্রকোণায় টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো প্রায়ই অচল হয়ে পড়েছে বলে জানায় কমিশন। পানির অবাধ প্রবাহের কারণে মোবাইল নেটওয়ার্ক অবকাঠামো পুনরায় সচলের কাজটি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে।
সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা এলাকায় চার মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের ২ হাজার ৫২৮ সাইট (বিটিএস) রয়েছে। বন্যাপ্লাবিত এলাকায় অবস্থিত ১ হাজার ১৫৯ সাইটে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। যার মধ্যে ১৫৭টি চালু করা হয়েছে।