ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) যাচাইয়ে নির্বাচন কমিশন বিরোধী দল বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি দলটি। বিএনপি মনে করে, তারা যেখানে এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে না, সেখানে ইসি নিয়ে ভাবনাটা অর্থহীন। বরং তাদের মূল লক্ষ্য এখন সরকার পতন।
দেশে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে প্রয়োজনে তাদের টেকনিক্যাল পারসনসহ ইভিএম যাচাই করে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ইসি।
কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইভিএম যাচাইয়ের জন্য আগামী ১৯, ২১ ও ২৮ জুন রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন কমিশনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। টেকনিক্যাল পারসনসহ একটি দল থেকে সর্বোচ্চ চারজনকে আসার অনুরোধ করা হয়েছে। এদিন তারা ইভিএম খুলে যেকোনোভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারবেন।’
এই ধারাবাহিকতায় বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ২১ তারিখে। এ বিষয়ে শনিবার বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সাথে কথা বলে নিউজবাংলা। তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইভিএম যাচাই কাজে তারা অংশ নিচ্ছেন না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ এই কাজে যাচ্ছি না। শুধু এই আমন্ত্রণ না, এ সংক্রান্ত কোনো আমন্ত্রণ নিয়েই বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই। বিএনপির মূল লক্ষ্য এই সরকার হটিয়ে জনগনকে মুক্ত করা।
‘এসব লোক দেখানো কাজ করে চোখে ঠুলি পরানোর আমন্ত্রণে বিএনপি সাড়া দেবে না। এ সরকারের অধীনে সবাই সরকারের আজ্ঞাবহ। তাদের এসব মুখরোচক কথায় বিএনপি ভুলবে না।’
আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বিএনপি ইসির এই আমন্ত্রণে যাচ্ছে না। আমরা বলতে চাই, এ সরকারের অধীনে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান, এমনকি কোনো ব্যক্তির সাথেও কোনোপ্রকার বৈঠক, আলাপচারিতায় বিএনপি অংশ নেবে না। বিএনপি ইসি নিয়েই ভাবছে না। বিএনপির মূল লক্ষ্য সরকারের পতন।’
তবে ইসি তো সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদে ইভিএম যাচায় করার সুযোগটাও দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যেখানে নির্বাচনেই অংশ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে ভোট চুরি হলো, রাতে হলো নাকি ভোরে হলো সে নিয়ে ভাবার তো কিছু নেই।’
এ বিষয়ে জানতে বিএনপি মহাসচিবকে ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে দল কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে, চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যা জানি, সে অনুযায়ী দল এই আমন্ত্রণে না যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছে।’
১৯ জুন যারা ইসিতে আমন্ত্রণ পেয়েছে
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এনডিএম ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।
২১ জুন যারা ইসিতে আমন্ত্রণ পেয়েছে
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ- বিএমএল।
২৮ জুন যারা ইসিতে আমন্ত্রণ পেয়েছে
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল- এমএল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমপক্ষে ১০০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে চায় বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। ইসির হাতে বর্তমানে ১ লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে, যা দিয়ে সর্বোচ্চ ১০০ আসনে ভোট করা যাবে।