উজানের পাহাড়ি ঢল আর টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দোকানপাটে।
শনিবার এরই মধ্যে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। গবাদিপশুসহ মালামাল সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন কেউ কেউ।
স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক দিন পানি হালকা বাড়তে থাকলেও শুক্রবার সকাল ৯টার পর থেকে তা দ্রুতই বাড়তে থাকে।
ইটনা উপজেলার ছিলনী গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা রওশন আলী রুশো নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অতীতে আমরা চৈত্র মাসেও বন্যা হতে দেখেছি। ১৯৭৪ সালেও আষাঢ় মাসে বন্যা হয়েছিল। তখনও এভাবেই বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছিল।
‘তখন সবার বাড়িঘর আরও নিচু ছিল। বর্তমানে সেগুলোতে মাটি ভরাট করে অনেক উঁচু করা হয়েছে। তার পরও সেগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। বিশেষ করে নতুন বাড়িগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।’
অতীতের চেয়ে এবারের পরিস্থিতি ভয়াবহ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারে এসেছি। এসে দেখি বাজারের পূর্ব পাশের সড়কগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদ বিদ্যাপীঠেও পানি প্রবেশ করেছে। অনেকের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে।’
ইটনা উপজেলার লাইমপাশা গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর ফরিদ বলেন, ‘উজানের ঢল আর দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে চলাচলের সড়কগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। অনেকের মাছের পুকুর ডুবে গেছে। গোলাঘরেও পানি ঢুকেছে। সব মিলিয়ে এখানকার লোকজন খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে আছেন। পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে না।’
ইটনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাফিসা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইটনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। সেখানকার লোকজন ইটনা সদরে অবস্থিত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সরকারি কলেজসহ অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।
‘আজ সকাল থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে প্লাবিত এলাকাগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বর্তমানে নৌকায় আছি, প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করছি। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’
নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু হাসান বলেন, ‘ইতোমধ্যেই উপজেলার কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ছাতিরচর, সিংপুর, দামপাড়া ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সিলেট ও সুনামগঞ্জে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, এভাবে বৃষ্টি হলে নিকলী উপজেলার অনেক এলাকাতেও বন্যা হয়ে যাবে।’
অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতিতে অষ্টগ্রামের অবস্থা হাওরের অন্যান্য উপজেলার তুলনায় ভালো। সদর ইউনিয়নের ৪০-৫০টি বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। অন্যান্য ইউনিয়নে এখনও পানি ঢোকেনি।’
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘কিশোরগঞ্জের নদ-নদীর পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের মতো কিশোরগঞ্জের অবস্থাও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এভারেজে বিভিন্ন পয়েন্টের পানি ৩ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সরেজমিন দেখার জন্য আমি হাওরের পথে রওনা হয়েছি।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে হাওর অঞ্চল ঘুরে দেখেছি। অনেক এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। সেখানকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৪০ টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’