ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের তলিয়ে গেছে শেরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অন্তত ৪০ হাজার মানুষ।
আন্তঃসীমান্ত নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার পাঁচটি ও শ্রীবরদীর দুটি ইউনিয়ন; চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীর পানিতে নালিতাবাড়ীর পাঁচটি ও শেরপুর সদরের একটি ইউনিয়নসহ জেলার ১৩টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে এই দুই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের ঝিনাইগাতী, রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, বনকালি, চতল ও আহম্মদনগর; ধানশাইল ইউনিয়নের ধানশাইল, বাগেরভিটা, কান্দুলী, বিলাসপুর ও মাদারপুর এবং কাংশা ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর চরণতলা, আয়নাপুর, কাংশাসহ ৫০টি নিম্নাঞ্চল গ্রাম।
পাহাড়ি ঢলের তোড়ে মহারশির বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। ঝিনাইগাতী-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে ঢলের পানি। পানিতে তলিয়ে গেছে কাঁচা-পাকা বহু সড়ক, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রিজ-কালভার্ট। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ।
চতল গ্রামের বাসিন্দা নুরেজা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাত দিন আগে ঢলের পানি আইয়া সব ভাসায় নিয়া গেছিলগা। এই পানি কমতে না কমতে আবার পানি আইছে। সব বইরা গেছে। এহন কী করমু, কী খামু। কোনো রহমে পোলাপান নিয়া চকির উপরে থাকতাছি।’
অজুফা বেগম বলেন, ‘আমরা তো রান্নাবান্নাও কইরা খাবার পাইতাছি না। মুড়ির টিন ভাইঙ্গা খাইয়া বাঁইচ্চা আছি।’
মাটিয়াপাড়া গ্রামের নুরুল আমিন বলেন, ‘মাঠঘাট সব তো ডুবছে, আমাগো বাড়িতেও এক হাডু (হাঁটু) পানি। কেমনে কী করমু? নিজেরাও চলাচল করবার পাইতাছি না। গরু- ছাগলগুলারেও খাওয়াবার পাইতাছি না। গরুগুলারে কোনো রহম উপরে রাখছি।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬০ টন চাল, ৩ লাখ টাকা ও দেড় হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিতরণও শুরু হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সভা করে সবাইকে বন্যা মোকাবিলায় কাজ করে যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সব সরকারি কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’