বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিদ্যুৎ-ইন্টারনেটহীন সুনামগঞ্জ, দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন

  •    
  • ১৭ জুন, ২০২২ ২৩:৩৫

‘বন্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎহীনতা। সারা জেলায় বিদ্যুৎ নেই। ইন্টারনেট নেই। দুই-একটি এলাকা ছাড়া বাকি জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই। সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় উদ্ধার তৎপরতাও ব্যাহত হচ্ছে।’

সুনামগঞ্জে একটি জায়গা নেই যেখানে পানি প্রবেশ প্রবেশ করেনি। সবখানে পানি। একতলা কোনো ঘর বসবাসের উপযোগী নেই।

সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সবগুলো সরকারি অফিসকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎহীনতা। সারা জেলায় বিদ্যুৎ নেই। ইন্টারনেট নেই। দুই-একটি এলাকা ছাড়া বাকি জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই। সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় উদ্ধার তৎপরতাও ব্যাহত হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসকের বক্তব্য থেকেই ধারণা মেলে সুনামগঞ্জের বর্তমান অবস্থা।

বৃহস্পতিবার রাতেই পানিতে তলিয়ে যায় সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক। এতে ওই রাতেই সড়ক পথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জ।

শুক্রবার সকাল থেকে বিদ্যুতহীনতা, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকায় সবদিক থেকেই এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জ।

বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট না থাকায় সুনামগঞ্জের দুর্যোগ ও দুর্ভোগের চিত্র সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে না জানিয়ে সুনামগঞ্জের সাংবাদিক শামস শামিম শুক্রবার ফেসবুকে লেখেন, ‘সুনামগঞ্জের প্রলয়ঙ্করী বন্যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারের দাবি রাখে। জাতীয়ভাবে এই সংবাদ শীর্ষে থাকার কথা। কিন্তু টিভি, পত্রিকা, অনলাইন মানুষের এই ভয়াবহ দুর্ভোগের খবর, অসহায়ত্বকে গুরুত্ব দিয়ে ছাপতে, প্রচার করতে পারছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ব্যর্থ।

‘সচেতন মানুষজন দোষ দিচ্ছেন মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে। গুজব বিশ্বাসী মানুষ দোষ দিচ্ছে প্রশাসনকে। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলো প্রকৃতি দেশের এই ভয়াবহ দুর্যোগের খবরটি ব্লাকআউট করে দিয়েছে নিজেই। এতে মিডিয়া, সরকার কারো কোনো দোষ নেই।

'জেলা ও উপজেলা শহরের বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট ও সরকারি বেসরকারি স্থাপনার সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে সুনামগঞ্জ ও ছাতকের বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ডুবে গেছে। যে কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে বন্ধ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফলে মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ। তাই মূলধারার মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সুনামগঞ্জের বন্যার ভয়াবহ, বিভীষিকাময় সংবাদটি জাতি জানতে পারছে না।

‘সুনামগঞ্জ জেলা বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ এবং টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পানিতে ভাসছে জনপদ। মানুষের হাহাকার শুনতে পারছে না জাতি।’

শুক্রবার রাতে শামস শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় ছিলাম। এখন ঢাকা থেকে ফিরছি। কিন্তু সুনামগঞ্জের সড়ক বন্ধ। তাই সিলেটে আসছি।

‘মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকায় আমি বাসার কারও সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছি না। পুরো শহর পানিতে তলিয়ে গেছে। অবস্থা ভয়াবহ। কিন্তু সেই চিত্র মানুষকে জানানোও যাচ্ছে না।’

জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যা আক্রান্ত সুনামগঞ্জ শহর, সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক ও জামালগঞ্জ উপজেলা। সুনামগঞ্জ শহরের একতলা সব বাসায়ই পানি। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগের সড়কও। ফলে সুনামগঞ্জের একেকটি উপজেলা পরিণত হয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে।

জেলার তেঘরি এলাকার বাসিন্দা রাজন মিয়া বলেন, ‘আমি ৫০ বছরেও এমন পানি কখনও দেখিনি। পানিতে আমাদের ঘরের বিছানাপত্রও তলিয়ে গেছে। এখন ত্রাণের চেয়ে আমাদের আশ্রয় জরুরি। নতুবা পানিতে তলিয়ে যেতে হবে।’

শহরের নতুনপাড়ার বাসিন্দা সুজক নন্দী বলেন, ‘বৃহস্পতিবারই আমাদের পাড়ার সব ঘরে পানি ঢুকে পড়ে। শুক্রবার ঘরের ভেতরেই কোমর পানি হয়ে গেছে। নৌকার অভাবে পরিবারের লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রেও নেয়া যাচ্ছে না।’

জেলার ছাতক উপজেলার খুমনা এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ আনোয়ারুল হক বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। পুরো এলাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে আছে সাপসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের ভয়।’

ঘরের গবাদিপশুকে নিয়ে সবচেয়ে সংকটে পড়েছেন বলে জানান এই এলাকার বাসিন্দা আহাদ আহমদ। বলেন, ‘আমরা একটি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। এখানে গরু রাখার মতো জায়গা নেই। ফলে গরুগুলো পানির মধ্যেই আছে।’

কী পরিমাণ মানুষ পানিবন্দি আছে এমন কোনো তথ্য নেই জানিয়ে জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব জায়গায় পানি। জেলার সব মানুষই পানিবন্দি। ফলে আলাদা করে এখন পানিবন্দি কতজন, তা গুণে দেখা সম্ভব নয়।

‘জেলার সরকারি-বেসরকারি সব ভবনই এখন আশ্রয়কেন্দ্র। ফলে আলাদাভাবে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যাও বলা সম্ভব নয়।’

শনিবার সকাল থেকে জেলায় বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করবে বলে জানান এই জেলা প্রশাসক।

এ বিভাগের আরো খবর