বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দিনাজপুরে ৯৩৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক

  • দিনাজপুর প্রতিনিধি   
  • ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২৩:৪৫

দিনাজপুর জেলায় ১ হাজার ৮৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৩৮টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এতে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলার পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষাদানও ব্যাহত হচ্ছে। সহকারি শিক্ষকরা এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগ হারাচ্ছেন।

দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩টি উপজেলায় ১ হাজার ৮৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৯৩৮টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সদর উপজেলায় ১৮৬টির মধ্যে ৫৪টি, কাহারোল উপজেলার ১২০টির মধ্যে ৭১টি, খানাসামা উপজেলায় ১৪৩টির মধ্যে ৬৭টি, ঘোড়াঘাট উপজেলায় ৬৭টির মধ্যে ৪১টি, চিরিরবন্দর উপজেলায় ১৯৮টির মধ্যে ১১৫টি, নবাবগঞ্জ উপজেলায় ১৪৯টির মধ্যে ৭৫টি, পার্বতীপুর উপজেলায় ২০৬টির মধ্যে ১০৫টি, ফুলবাড়ী উপজেলায় ১০৯টির মধ্যে ৬৫টি, বিরল উপজেলায় ১৬৭টির মধ্যে ৮০টি, বিরামপুর উপজেলায় ১১৬টির মধ্যে ৬৮টি, বীরগঞ্জ উপজেলার ২৩০টির মধ্যে ১১৮টি, বোচাগঞ্জ উপজেলায় ১৩২টির মধ্যে ৫৯টি ও হাকিমপুর উপজেলায় ৪৬টির মধ্যে ২০টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালা অনুযায়ী ৩৫ শতাংশ প্রধান শিক্ষক সরাসরি নিয়োগ হয় ও ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে হয়। বর্তমানে সরাসরি নিয়োগ হওয়া প্রধান শিক্ষকের মধ্যে অনেকেই অবসরে চলে গেছেন। অপরদিকে মামলার কারণে আদালতের নিষেধাজ্ঞায় থাকায় ২০০৯ সাল থেকে পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন থেকে পদোন্নতি বন্ধ থাকায় শিক্ষকরাও পাঠদান কার্যক্রমে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। আবার ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ পক্রিয়াতে রয়েছে গাফিলতি।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি দিনাজপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মো. মতিয়ার রহমান জানান, যারা ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি করছেন। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের পদোন্নতি না দিয়ে নতুনদের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। আইনি জটিলতার কারণে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সদিচ্ছাই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ায় সহকারী শিক্ষকরা হতাশ হয়েছেন। তার মতে অবিলম্বে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে শতভাগ পদোন্নতি দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি দিনাজপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. গোলাম ফারুক জানান, চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের কথা অন্য শিক্ষকরা মানতে চান না। কারণ সবাই একই পদমর্যাদার সহকারী শিক্ষক হিসেবে গণ্য। এতে করে পাঠদান ব্যাহত হয় ও প্রশাসনিক কাজেও জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্যার সমাধানে দ্রুত প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা জরুরি।

দিনাজপুর শহরের পুলহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন জানান, মামলাজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া নতুনভাবে পদোন্নতিও বন্ধ। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার মান চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক না থাকায় পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। তাদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে।

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এটিএম তোফায়েল হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক না থাকায় মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা কেউই মানতে চান না। উভয়ই একই পদে হওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া জরুরি।

এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিমা আক্তার বলে, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে আমি কোনো দিন হেড স্যার দেখিনি। হেড স্যার না থাকায় আমাদের সমস্যা হয়। আমাদের বিদ্যালয়ে একজন হেড স্যার থাকলে আমাদের পড়ালেখা আরও ভালো হবে।’

দিনাজপুর সদরের স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রের অভিভাবক সাবিনা আলী হোসেন বলেন, এই স্কুলের ৫টি পদের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। এই বিদ্যালয়ে মাত্র ৪ জন শিক্ষকের পক্ষে প্রতিটি ক্লাস পরিচালনা করা কষ্টকর। এছাড়া এখানে মাত্র ৩টি শ্রেণিকক্ষ। বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান উন্নয়নের জন্য দ্রুত শিক্ষক-স্বল্পতা দূর করা দরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুজ্জামান জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রধান শিক্ষকের পদে পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মামলা নিষ্পত্তি হলে পদোন্নতির মাধ্যমে এসব শূন্যপদ পূরণ করা যাবে।

এ বিভাগের আরো খবর