বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাড়ছে নদ-নদীর পানি, উত্তরে বন্যার অবনতি

  •    
  • ১৭ জুন, ২০২২ ২০:৫৩

পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কুড়িগ্রাম বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তবে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার শঙ্কা কম।’

ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রাম, শেরপুর, লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।

উত্তরের বিভিন্ন জেলায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় বন্য পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ লোকালয়ের মানুষ। বন্য পরিস্থিতির আরও অবনতির শঙ্কা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমা পার হয়েছে। এতে ছয়টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

ধরলা ও তিস্তার পানি লালমনিরহাটে বিপৎসীমা উতরে জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ি মহারশি, ভোগাই, সোমেশ্বরী ও চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

যমুনার পানি বগুড়ার সারিয়াকান্দির মথুরাপাড়া পয়েন্টে বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যমুনার তীর রক্ষাবাঁধের পাশের বাসিন্দারা বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে।

কুড়িগ্রামে বেড়েই চলেছে বানের পানি

ব্রহ্মপুত্র-ধরলার পানি বিপৎসীমা পার হওয়ার পর কুড়িগ্রামে অন্য নদ-নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, কুড়িগ্রাম সদরে ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত যাত্রাপুর ইউনিয়নে গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকে পরিবার নিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন।

পোড়ারচর গ্রামের বাসিন্দা হাকিম মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টি-বন্যায় অসহায় হয়ে পড়েছি। বউ-বাচ্চা নিয়া কয়েক দিন ধরে শুকনা খাবার খেয়ে আছি। রান্না করার মতো অবস্থা নেই।’

বানের একবুক পানি বেয়ে ঘর থেকে আসবাবপত্র এবং খড়ি নৌকায় তুলছেন আয়না বেগম। তার মায়ের সঙ্গে দুটি শিশুসন্তান নৌকায় বসিয়ে রেখেছেন।

আয়না বেগম বলেন, ‘পাঁচ-ছয় দিন ধরে বন্যার পানি ঢোকা শুরু করেছে। কাল রাত থাকি ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এলা ঘরের জিনিস সরে নিবার সময় পায়নি। একবুক পানি ভেঙে জিনিস জানাস বের করা নাগবাইছে। উঁচু স্থানত যায়া আশ্রয় নিব। কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাই নাই।’

সেকেন্দার আলী বলেন, ‘বানের পানিত ঢেউ আর স্রোত বেশি। তলিয়ে যাওয়া ঘরবাড়ির বেড়া খুলে নৌকায় করে অন্য জায়গায় যাচ্ছি।’

স্থানীয় সংবাদকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, জেলার ছয় উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের ৬০-৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানি প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন এলাকায় ঢুকে পড়ছে।

জেলার প্রায় ২ হাজার ৬৩ হেক্টর জমির ধান, ৯০৩ হেক্টর জমির পাট, ৭৮ হেক্টর জমির অন্য ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর, বামনডাঙ্গা, নুনখাওয়া, বল্লভেসের খাস, কালীগঞ্জ, বেরুবাড়ি।

সদরের ঘোগাদহ,যাত্রাপুর, হলোখানা,পাঁচগাছি, মোগলবাসা, উলিপুরের হাতিয়া, বুড়াবুড়ি, সাহের আলগা, বেগমগঞ্জ এবং চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ,অষ্টমির চর,রমনা, নয়ারহাট, চিলমারী সদর পানির নিচে।রৌমারীর শৌলমারী, যাদুরচর, রৌমারী সদর এবং রাজীবপুর উপজেলার রাজীবপুর সদর ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন মানুষ।

যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কয়েক শ পরিবার ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, শুক্রবার বেলা ৩টায় ধরলার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। রৌমারী উপজেলায় আট শতাধিক পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আব্দুর সবুর মিয়া বলেন, ভারি বৃষ্টিসহ বজ্রপাত হতে পারে। কবে নাগাদ আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।

পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কুড়িগ্রাম বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

তবে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার শঙ্কা কম বলেও জানান তিনি।শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় শেরপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ি এলাকার চারটি নদীর পানিই বৃদ্ধি পেয়েছে। মহারশি, ভোগাই, সোমেশ্বরী ও চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।

ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলা শহরে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বাড়ায় বেড়েছে দুর্ভোগ। দুই উপজেলার ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

হাতিবান্ধা ইউনিয়নের তমছের আলী বলেন, ‘পানি এল্লা কমবার দরছিলো আজ আবার রাত থাইকা বৃষ্টি হইয়া হঠাৎ কইরা পানি বাড়তাছে। কী করমু এহন, কী খামু। একটা ব্রিজ ছিল কয়দিন আগে ঐডাও ভাইঙ্গা নিয়া গেছে। পানি বাইরা আমগরে ইউনিয়নের ছয় গ্রামের মানুষ খুব বিপদে পড়েছে।’

সদর ইউনিয়নের রাহেলা বেগম বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে পরছি। পানি আওয়ার জন্য গরু-ছাগলগুইলা না খাইয়া আছে। পানি আমাগো এনো থাইক্কা কয়দিন আগে নাইমা গেছিলো গা। আজ রাত থাইক্কা বৃষ্টিতে আবার পানি বাড়লো। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি বাড়ে, সকাল থাইক্কা বেশি এই পানি আইতাছে।’

আহম্মদনগরের বাসিন্দা আছমত আলী বলেন, ‘আমার প্রজেক্টের মাছ পাহাড়ি ঢলে ভাসায় নিয়া গেছে গা। পানির চেয়ে মাছ আগে গেছে গা। কর্জধার কইরা মাছ চাষ করছিলাম এহন কী কইরা খামু।’

শেরপুর পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী জানান, ‘জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হবে। ২৪ ঘণ্টায় পাহাড়ি চার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। চেল্লাখালী নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ১৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন শুক্রবার সকাল ১০টায় ভার্চুয়ালি প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

শুকনো খাবারসহ ত্রাণ বিতরণে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

বেড়েই চলেছে তিস্তার পানি

লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

তিস্তাপারের কালমাটি মাস্টারপাড়ার আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘হামরা ত বন্যাতে ডুবি গেইছি। কিছু একনা করি দেও ব্যাহে? রাস্তাঘাটের ব্যবস্থা করি দেও।’

একই এলাকার আমেনা বেগম বলেন, ‘ডিসি সাইব কয় হামার এত্তি নাকি বন্যা হয় নাই। হামরা এক কোমর পানিত আছি আর ওমরা কয় পানি নাই। ডিসি সাইব আসি দেখি যাউক তো হামরা কোনটে আছি।’

লালমনিরহাটে তিস্তাপারের খুনিয়াগাছ, গোকুণ্ডা, মহিষখোঁচা, চরফলিমারী, মোগলহাট, কুলাঘাট, বড়বাড়ি ইউনিয়নের কয়েক শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরও বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাকবলিত হবে বলে জানিয়েছে পাউবো।

এ বিষয়ে পাউবোর ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। আমরা ব্যারাজসহ আশপাশের এলাকা মনিটর করছি।’

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, লালমনিরহাটে ধরলা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর নিউজবাংলাকে বলেন, কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে আসা পানির কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। পর্যবেক্ষণ করছি জেলার সব উপজেলা। সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া আছে, তারা মাঠে কাজ করছেন।

যমুনার পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপরে

উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যমুনার তীর রক্ষার বেড়িবাঁধের পাশের বাসিন্দারা বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সারিয়াকান্দি মথুরাপাড়া পয়েন্টে যমুনার পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সারিয়াকান্দির উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) আব্দুর রহমান তাযকিয়া পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।তিনি জানান, যমুনা নদীর বিপৎসীমা ধরা হয় ১৬ দশমিক ৭০ মিটার। সন্ধ্যা ৬টার দিকে যমুনার পানি ১৬ দশমিক ৭২ মিটার উচ্চতায় ছিল। আব্দুর রহমান আরও বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির ধরন দেখে মনে হচ্ছে শনিবারের মধ্যে এই পানি বিপৎসীমার অন্তত ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে।’

পাউবো জানায়, চলতি মাসের প্রথম থেকে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। উজানে বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢল ভাটি দিয়ে নেমে যাচ্ছে। সারিয়াকান্দির বেশ কয়েকটি চরের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া যমুনা নদী থেকে ডান তীরের বেড়িবাঁধের মধ্যে বসবাসকারী বাসিন্দারা বন্যার কবলে পড়েছেন।

পাউবো কর্মকর্তারা জানান, বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলা মিলে যমুনা নদীর ডান তীরে ৪৫ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। চলতি বছর বাঁধের প্রায় ৪৬টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলার বেশির ভাগ অংশই ঝুঁকিপূর্ণ। এ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের সাত কিলোমিটার বাঁধে এমন ঝুকিঁপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

বন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুর রহমান বলেন, ‘কামালপুর ইউনিয়নে সমস্যা বেশি। এই এলাকার প্রায় সাত কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। পানি বৃদ্ধির পর পরই আমরা এ ইউনিয়নের রহদহ গ্রামে অবস্থান করছি। বাঁধে এখনও ভাঙন দেখা দেয়নি। আমরা নজরদারিতে রেখেছি।’

এ বিভাগের আরো খবর