পরিবর্তনশীল বিশ্বে নানা জোট ও ফোরাম তৈরি হচ্ছে। আমরা এসবে খেয়াল রাখছি। আর্থিক লাভ ছাড়া আমরা এসব জোট বা ফোরামে যাব না। আমরা নিজেদের ক্ষতি করব না।
বৃহস্পতিবার ‘পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থা: বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ’ শীর্ষক সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এসব কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এই সেমিনারের আয়োজন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্দো-প্যাসিফিক ইকনোমিক ফ্রেমওয়ার্ক’, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা জোট ‘কোয়াড’ ও চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগসহ এ অঞ্চলভিত্তিক বেশ কিছু জোট হয়েছে। বাংলাদেশ এই জোটগুলো থেকে লাভবান হবে।”
মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পররাষ্ট্র নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ আমাদের জন্য কিছু সুবিধা বয়ে আনছে এবং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রেখেছে।
‘দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে অর্থনৈতিক লাভের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এসব জোট ও ফোরামে সম্পৃক্ত হব। যেসব জোট কারো ক্ষতি চায় না এবং যাদের কোনো আক্রমণাত্মক এজেন্ডা নেই সেসব জোটের সঙ্গে আমরা যুক্ত হব।’
ড. মোমেন বলেন, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক মজবুত করতে এবং রাষ্ট্রগুলোতে উদীয়মান প্রতিযোগিতামূলক বিভাজনের ঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী এবং বিশ্বের পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে।
‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা গঠিত হয়েছিল। করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক দেশে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আমাদের চারপাশের বিশ্ব এ অবস্থার মধ্য দিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক নানা সংকট সত্ত্বেও মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে মানবতাই সবার ঊর্ধ্বে। আর এক সপ্তাহ পর পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে। পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও অনেক বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে এ সেতু আমরা গড়তে সক্ষম হয়েছি।’
সেমিনারে বিআইআইএসএস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘পরিবর্তনশীল বিশ্ব ব্যবস্থার অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার কূটনীতির মূলনীতি অবলম্বন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে নিচ্ছে।’
আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দেশের উন্নয়নসহ জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
‘বৈশ্বিক এ পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রেখে রপ্তানিনির্ভর বাজার ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন প্রবহমান রাখার বিষয়গুলোর ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি। এজন্য বাংলাদেশকে খাদ্য ও পরিবেশগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং যথাযথভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’
সেমিনারে কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক, অর্থনীতিবিদ, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে তাদের উপস্থাপনা তুলে ধরেন। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাজনীতি-সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন।