বুধবার সকালে বিয়ের কথা ছিল মেয়েটির। আর্থিক সংকট থাকায় জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করতে না পারলেও সব স্বজনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
বিয়ের আগে কনেকে তুলে নেয়াকে কেন্দ্র করে মারধরের ঘটনায় রাসেল নামে এক যুবকের নিহতের ঘটনায় বদলে যায় প্রেক্ষাপট। এ ঘটনায় আহত হন আরও ছয়জন।
কী ঘটেছিল
মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে কনের বাড়িতে বরিশাট গ্রামের ২০ বছরের যুবক মঞ্জুরুল কয়েকজন নিয়ে হাজির হন। মঞ্জুরুল নিজের কনের প্রেমিক দাবি করে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন।
এতে টানাহেঁচড়া শুরু হলে মঞ্জুরুল ও তার সঙ্গে থাকা বন্ধুরা আরও ক্ষিপ্ত হন।
কনের বড় বোন বলেন, ‘আমার ছোট বোনের পরনের কাপড় ছিঁড়ে যায় টানাহেঁচড়ায়। তার পরও তারা টানাটানি করতে থাকেন। বাড়িতে তখন কোনো পুরুষ ছিল না। সবাই স্থানীয় গাঙনালিয়া হাটে ছিল।
‘আমরা বাঁচাও বলে চিৎকার করি। এতে আশপাশের প্রতিবেশীরা তাদের বাঁচাতে চলে আসেন। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে আমার বাবা ও কাকা আহত হন।
কনের বড় বোন আরও বলেন, ‘যে ছেলেটা মারা গেছে, ওর মাথায় কে যেন লাঠি দিয়ে জোরে আঘাত করে। তখন আমরা স্থানীয় চিকিৎসক মফিজ ও ইকবাল হোসেনকে ডেকে আনি। চিকিৎসায় ভালো না হলে রাসেলকে তারা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় শুনছি। মারামারিতে দুই পক্ষের ৭-১০ জন আহত হন। তবে রাসেল নামের ছেলেটার অবস্থা ভালো ছিল না।
‘মারামারির পর আমার বাবা ও চাচারা ভয়ে থাকেন। কখন আবার ওই ছেলেরা হামলা করে বসে। তবু মারামারির পর রাতে বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। বুধবার ভোরে বাবা বাজারে গিয়ে মাংস কিনে আনেন। সকাল ৭টায় আমরা খবর পেলাম, রাসেল ঢাকার হাসপাতালে মারা গেছে।। তখন বিয়ের সব প্রস্তুতি থেমে যায়। বরপক্ষও আর যোগাযোগ করে না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির পুরুষরা যে যার মতো দূরে চলে গেছে। এমনকি ছোট বোনকে আমরা অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিয়েছি।’
কনের চাচি বলেন, ‘আমরা হামলা করিনি। তারা প্রেমিক বললেও আসলে ভুয়া কথা। আমাদের মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ত। তার বয়স বেশি ছিল, কিন্তু পড়াশোনায় ঝামেলায় ছিল বলে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত।’
মেয়ের বয়স ১৮ বছর হয়েছে দাবি করলেও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি।
কনের চাচি আরও বলেন, ‘প্রেমিক দাবি করা ছেলে মঞ্জুরুল বখাটে। সে আমাদের মেয়েকে দলবলসহ বিরক্ত করত। এর জেরে তারা বিয়ে ভাঙতে মঙ্গলবার রাতে আমাদের বাড়িতে মেয়ের হাত ধরে নিয়ে যেতে চায়। পরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় তাদের বাধা দেয়া হয়। এতে মারামারিতে ওই ছেলেটার মাথা ফেটে যায়।
‘কে করেছে জানি না, কারণ দুই পক্ষের সবাই হাতাহাতি করছিল। ওদের হাতে দা, বঁটি ছিল। এখন ছেলেটা মারা গেছে বলে তারা অনেক কথাই বানিয়ে বলছে।’
নিহত রাসেলের বাবা জলিল শেখ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলে অটো চালাত। তার একটা তিন মাসের ছেলে আছে। কখনও কোনো ঝামেলায় যায় না। মঙ্গলবার অটো রেখে তার চাচাকে বোনের বাড়ি ছোনপুরে যায়। গিয়ে দেখে ওখানে আমাদের পাশের বাড়ির ছেলে মঞ্জুরুলসহ এলাকার কয়জন একটা মেয়ের বাড়িতে কথা-কাটাকাটি করছে।
‘মুহূর্তের মধ্যে দুপক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হলে রাসেলকে ওরা মাথায় আঘাত করে। রাসেলের চাচাতো বোন দৌড়ে এসে বলে এখানে রাসেল কিছু জানে না। তার পরও তারা রাসেলকে কুপিয়ে মেরেছে।
‘এটা পরিকল্পিত হত্যা, আমার ছেলে ওই মঞ্জুরুলদের সঙ্গে যায়নি। বিনা দোষে তাকে মরতে হলো। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
প্রেমিক দাবি করা মঞ্জুরুল বখাটে কি না জানতে চাইলে তার প্রতিবেশীরা জানান, সে কলেজে পড়ত। ভালো ছেলে, কোনো গন্ডগোলের মাঝে সে কখনও ছিল না। তার সঙ্গে ওই মেয়ের প্রেম ছিল।
মঞ্জুরুলের চাচা আলিয়ার জোয়ারদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেয়েটার সঙ্গে আমার ভাইয়ের ছেলের সম্পর্ক ছিল শুনেছি। মেয়েটার বিয়ে ঠিক হলে সে ওই মেয়ের কথামতো তাদের বাড়িতে উঠিয়ে আনতে যায়।
“এটা ওই মেয়েই বলেছে যে ‘আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে, তুমি যা করার করো।’ এতে আমার ভাস্তে এলাকার বন্ধু ও কাছের মানুষদের নিয়ে মেয়ের বাড়িতে যায়। এতে তারা ও তাদের প্রতিবেশীরা হামলা করে। এতে রাসেল নামে আমাদের পাশের বাড়ির একটা ছেলে গুরুতর আহত হওয়ার পর ঢাকায় চিকিৎসারত অবস্থায় আজ সকালে মারা যায়।’
কী বলছে পুলিশ
শ্রীপুর থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, ‘ছেলের পরিবার অভিযোগ এখনও দেয়নি। মেয়েটার বিয়ে ভেঙে গেছে বলে তার বাড়িতে গিয়ে শুনেছি।’
‘প্রেমিক দাবি করা মঞ্জুরুলকে আমরা তার বাড়িতে পাইনি। নিহতের পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে রাসেল সম্পর্কে জেনেছি। সে অটো চালিয়ে সংসার চালাত। পুলিশ পুরো বিষয়টি নজরে রেখেছে।’