নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। অংশগ্রহণমূলক ভোটেও জোর দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, যদি প্রধান বিরোধী দল ভোটে না আসে, তাহলে সে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে।
সোমবার দুর্নীতি বিরোধী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সিইসি আরও বলেন, ‘পুলিশ, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। নির্বাচনকে যদি সহিংসতার কারণে বিঘ্নিত হয়ে যায়, আমাদের ক্ষমতা আছে যে, কোনো একটি সেন্টার বা নির্বাচনটা বাতিল করে দেব। আমরা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকব।
‘নির্বাচনে যাতে ভোটারা যেতে পারে এবং নির্বিঘ্নে যেন ভোট দিতে পারে, সেই খবরটা আমরা রাখব। আর প্রচণ্ড রকম সহিংসতা যদি হয়ে যায়, তাহলে সেন্টার বা আসনে ভোট বাতিল করে দিতে পারব।'
টিআইবির সঙ্গে আলাপের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, ‘আমরা উনাদের বলেছি যে, আমাদের আইন কানুন যেটা আছে, সরকার আমাদের সহযোগিতা করতে বাধ্য। সকল নির্বাচনে আমরা সরকারের কাছে সহয়তাগুলো চাইব এবং অবশ্যই সরকার সে সহযোগিতাগুলো করবে বলে আশা করি।
‘সহায়তা মূলত পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রশাসনকেন্দ্রিক আর ডিফেন্স মিনিস্ট্রি। অন্য কোনো মিনিস্ট্রি নিয়ে আমাদের মাথা ঘামনোর কোনো দরকার নেই। জনপ্রশাসন যেহেতু জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে হ্যান্ডেল করে, তারপর পুলিশ প্রশাসনকে হ্যান্ডেল করে হোম মিনিস্ট্রি, আর সশস্ত্র বাহিনীকে যদি ইনভলব করা হয়, তাহলে ডিফেন্স মিনিস্ট্রি লাগবে। আর একই কথা বারবার বলেছিল অসংখ্যকবার।’
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে এলাকা ছাড়তে বললেও তিনি সেখানেই অবস্থান করার বিষয়টি তুলে ধরে সিইসিকে এক গণমাধ্যমকর্মী প্রশ্ন করেন, ‘বাহারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। সামনে জাতীয় নির্বাচনে এমপিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কি-না।’
সিইসি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ করতে পারব কি-না জানি না। কতগুলো বিষয় আছে উনাকে চিঠি দিয়েছিলাম যেন উনি না থাকেন (এলাকায়)। কিন্তু সংসদ নির্বাচন যখন হবে, তখন তো উনারা সংসদীয় এলাকায় থাকবেন। কিছু আচরণ ফলো করতে হবে। এই বিষয়টা তো আপেক্ষিক যে, আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব কি পারব না। আমাদের চেষ্টা থাকবে। এবং আমি আশা করি আমরা পারব।’
সবার অংশগ্রহণে জোর
ভোটে সব দলকে দেখতে চান বলেও জানিয়ে দেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘ডেমোক্রেসির মূল কথাই হচ্ছে পজিশন এবং অপজিশন। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে যেটা দেখি সেটা কিন্তু গভর্নমেন্ট নয়। যারা জয়ী হয়ে যেটা পার্লামেন্টে আসেন, দ্যাট ইজ পার্ট অব দি গভর্নমেন্ট, লেজিসলেটর। যারা বিরোধী দলে থাকেন তাদের কাজেই হচ্ছে সমালোচনা করা। এই সমালোচনার মাধ্যমেই কিন্তু এক ধরনের জবাবদিহিতা গড়ে ওঠে। এবং সতর্কতা হয়। এজন্য আমরা চাই নির্বাচনটা অংশহগ্রহণমূলক হোক।'
নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সিইসি বলেন, ‘অপজিশন থেকে যে দাবিগুলো করা হচ্ছে, এগুলো নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্য সব বিভিন্ন সরকার, সেটা কিন্তু আমাদের বিষয় নয়। এটা সাংবিধানিক বিষয়। পলিটিক্যাল লিডাররা যদি একমত হন, তারা দেখবেন।'
সব দেশেই দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতেও হচ্ছে, বিলেতেও হচ্ছে, আমেরিকাতে হচ্ছে। যে সরকার যেটা আছে, তারা কিন্তু শপথ নিয়েছে, সংবিধানিক অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে, সম আচরণ করবে, পক্ষপাতিত্ব করবে না। উনারা বলেন নাই যে, তাদের দলকে আগামীতে আরও বেশি করে হেল্প করবে। আমরা বিশ্বাস উনারা উনাদের শপথটা জানেন। নির্বাচনের সময় অন্তত একাট সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের স্বার্থে উনারা নির্বাচনকালীন সরকারের থেকে সরকারের মতোই আচরণ করবেন। সরকারের মন্ত্রী হিসেবে কোনো দলের মন্ত্রী হিসেবে নয়।'
টিআইবির সঙ্গে আলোচনায় সংলাপে জোর দেয়ার কথাও জানান সিইসি। বলেন, ‘উনাদের বলেছি, প্রতিদিন যে আক্রমণাত্মক কমেন্টগুলো দিচ্ছে (রাজনৈতিক দল), সেখানে সরিয়ে নিয়ে এসে যদি টেবিলে মুখোমুখি করা যায়, তাহলে আলোচনা হবে গঠনমূলক।
‘টেবিলের বাইরে গিয়ে যদি ধারাবাহিকভাবে আক্রমণাত্মক বক্তব্য পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে দেয়, তাহলে কিন্তু দূরত্ব কমবে না। কারণ, আমরা চাচ্ছি নির্বাচনে সকল পার্টি অংশগ্রহণ করুক।'
নির্বাচন ব্যয় নিয়ন্ত্রণের চিন্তা
সিইসি মনে করেন, ভোটে অনেক টাকা খরচ হয় বলেই যেনতেনভাবে জিতে আসার চিন্তা থাকে।
তিনি বলেন, ‘নমিনেশন নিয়ে কত খরচ হয়, যার ফলে মনস্তাত্ত্বিক একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায় যে, জয়ী আমাকে হতেই হবে। যে পয়সা আমি খরচ করেছি, তা তুলে আনতেই হবে। এর ফলে একটা সহিংস চরিত্র গড়ে ওঠে। এই জায়গা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে জানি না। তবে দলগুলোর নেতৃত্বকে উপলিব্ধ করা উচিত যে, নির্বাচনটা যেন বাণিজ্য না হয়।'