কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে আবার জিততে পারলে যানজট ও জলাবদ্ধতা দূর করার পুরনো প্রতিশ্রুতিই নির্বাচনি ইশতেহারে তুলে ধরেছেন ভোটের লড়াইয়ে নেমে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাক্কু।
পৌরসভায় এক মেয়াদ আর সিটি করপোরেশনে টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে এই দুটি কাজে ব্যর্থতা নিয়েই ভোটের প্রচারে সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থীকে।
ভোটের তিন দিন আগে রোববার নগরীর নানুয়া দিঘীর পাড় ব্যক্তিগত কার্যালয়ে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের এই প্রার্থী তার নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরেন।
এতে প্রধান প্রতিশ্রুতি হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হতে পারলে নগরীর যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনে আগামী তিন বছরের জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করব।’
২০১৭ সালের নির্বাচনে সাক্কু যে নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ২৭টি সমস্যার সমাধান করবেন। এই সমস্যার মধ্যে প্রথম এবং প্রধান দুটি সমস্যা ছিল নগরীর যানজট ও জলাবদ্ধতা দূর করবেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগ, এই দুটি ক্ষেত্রে সাক্কু কোনো সফলতার দাবি করতে পারবেন না। বৃষ্টি হলেই শহরের প্রধান সড়কে, বাড়িতে পানি উঠে যায়।
সচেতন নাগরিক কমিটির কুমিল্লা শাখার সাবেক সভাপতি ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব বদরুল হুদা জেনু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যানজট নিরসনে দৃশ্যত মনিরুল হক সাক্কু ব্যর্থ। কারণ দীর্ঘ সময় পেয়েও তিনি সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে নগরীর জলবাদ্ধতা দূর করতে পারেননি।’
যানজট ও জলাবদ্ধতা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নগরীর রেসকোর্স, ঠাকুরপাড়া শিক্ষা বোর্ডের পেছনের এলাকা, নজরুল অ্যাভিনিউ, কাশারিপট্টি, মুরাদপুর, শাসনগাছা, চর্থার মানুষজন।
নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ড রেসকোর্স কাঠেরপুল এলাকার ফারুখ আহমেদ ও কামাল হোসেন বলেন, ‘ড্রেনের কাজ হলো, খাল পরিষ্কার হলো, তবুও বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় রেসকোর্স। অনেকেই শুধু জলাবদ্ধতার জন্য রেসকোর্স থেকে বাসা বদলে অন্য এলাকায় চলে যান। গত ১৫ বছরেও এই সমস্যার সমাধান হয়নি।’
আরও পড়ুন: মেয়র সাক্কু কী করেছেন, যা পারেননি
নজরুল অ্যাভিনিউর বাসিন্দা অঞ্জন দে বলেন, আকাশে মেঘ করলে আমরা ভয় পাই। নিচতলা আমাদের বাসা। পানি জমে যায়। কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা থেকে এক দিন পর্যন্ত পানিবন্দি থাকি।’
মলি রানি বলেন, ‘গত ১০ বছরে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে আমাদের ঘরে পানি প্রবেশ করে। অনেক আসবাব নষ্ট হয়েছে। আমাদের এই সমস্যার সমাধান করতে পারেননি মনিরুল হক সাক্কু।’
কুমিল্লা নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড হাউজিং এস্টেট। এই এলাকায় নিচতলায় থাকতে চায় না মানুষ। কারণ জানতে চাইলে আমিরুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘বৃষ্টি হলে ড্রেন ও খালের পানিতে একাকার হয়ে যায় এলাকা। ঘরে প্রবেশ করে পানি। এটা মেয়র সাক্কুর চরম ব্যর্থতা।’
জলাবদ্ধতা নিয়ে এক প্রশ্নে সাক্কু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি পুরোপুরি ব্যর্থ না। জলাবদ্ধতার জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, তা অদূর ভবিষ্যতে দেখতে পাবেন।’
মেয়র হিসেবে আগের আমলে কী করেছেন, সেটি ছাড়াও আগামীর নানা পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন সাক্কু।র
ইশতেহারে অবকাঠামো, সড়ক বাতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, ধর্মীয় সম্প্রীতি, বিনোদন, স্বাস্থ্য ও করোনাকালীন সেবা, তথ্য প্রযুক্তি, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বাজার শপিংমল, ক্রীড়া ও খেলার মাঠ, বস্তিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, ত্রাণ সহায়তা, নিরাপত্তা বিধানের কথা বলেন।
কুমিল্লাকে মাদক, সন্ত্রাস ও ইভটিজিং মুক্ত করার প্রতিশ্রুতিও দেন সাক্কু, যেগুলো এর আগেও দুই দফায় দিয়েছেন তিনি।
সাক্কু নিজেকে সিটি করপোরেশনের দুই বারের মেয়র হিসেবে সাফল্যও দাবি করেন। বলেন, ‘আমি নতুন একটি সিটি হাতে পেয়েছিলাম। যার কিছুই ছিল না। গত দুই সময়ে আমি যতটুকু পেরেছিল উন্নয়ন করেছি। আমার হাতে সিটির সমস্যার ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। তাই আগামীতে বিজয়ী হতে পারলে বাকি কাজ গুলো সম্পন্ন করব।’
গত শুক্রবার হাতপাকা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম ও শনিবার স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া নিজাম উদ্দিন কায়সার ইশতেহার ঘোষণা করেন।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ইশতেহার ঘোষণা করবেন না বলে তার নির্বাচনি পরিচালনায় জড়িতরা জানিয়েছেন। ভোটের প্রচারে নেমে তিনি কিছু মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
দল নিরপেক্ষ অপর এক প্রার্থী কামরুল হাসান বাবুলও ইশতেহার ঘোষণা করেননি।আগামী বুধবার কুমিল্লায় ভোট হবে। ২০১৭ সালের সবশেষ ভোটে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানাকে ১১ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন মনিরুল হক সাক্কু। তার মার্কা ছিল ধানের শীষ।
২০১২ সালে সিটি করপোরেশনের প্রথম ভোটে সাক্কু ৩৫ হাজার ভোটে হারান আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানকে।
এর আগে পৌরসভা নির্বাচনেও সাক্কু বড় ব্যবধানে জেতেন।