সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে বেড়েছে অচেনা মানসিক ভারসাম্যহীনদের আনাগোনা। শহরের রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, বিভিন্ন রাস্তার মোড়, মার্কেট ও বিপণিবিতানসহ অনেক স্থানে দেখা যাচ্ছে অপরিচিত মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীর।
এসব মানুষের কারও ভাষা বোঝা গেলেও বেশির ভাগই কথা বলেন না। যাদের ভাষা বোঝা যায় তারা হিন্দি বা বাংলায় কথা বলেন। অনেকে কিছু না বলে নির্বাক থাকেন।
পঞ্চগড়ের তিন দিক দিয়ে ভারতীয় সীমান্তপথ ২৮৮ কিলোমিটার। কয়েকজন স্থানীয়র দাবি, সম্প্রতি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, শিংরোড ও বড়শশী সীমান্তে বিএসএফ পুশইনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি মাসেই পঞ্চগড়ের সদরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অপরিচিত পাগলের সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্নভাবে এদের খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করা হলেও কারও সঠিক ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে না। সীমান্ত জেলা হওয়ার কারণে এদের অধিকাংশই ভারতীয় পুশইন হয়ে আসা।’
পঞ্চগড়ের শিশু সংগঠক, নাট্যকর্মী, লেখক ও গবেষক রহিম আব্দুর রহিম বলেন, ‘যে মাত্রায় পঞ্চগড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে সামাজিক পরিবেশে শিশু এবং নারীদের স্বাভাবিক চলাফেরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
তেঁতুলিয়ার ভজনপুর ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভারসাম্যহীন এসব মানুষে অসংলগ্ন কথাবার্তা সামাজিক পরিবেশকে বিব্রত পরিস্থিতিতে ফেলছে। এসব মানুষকে ন্যূনতম অধিকারে প্রতিষ্ঠিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।’
তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুদরতি খুদা মিলন বলেন, ‘বাংলাবান্ধা এলাকায় বেশ কিছু ভারসাম্যহীন মানুষ ভারত থেকে অনুপ্রবেশ করে এই এলাকায় চলাফেরা করছে, যাদের মধ্যে অনেকেই জটিল রোগে ভুগছেন। স্থানীয়ভাবে মানুষজন এদের খাদ্যসহায়তা ও চিকিৎসা প্রদান করে আসছে।’
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন রফিকুল হাসান জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এসব মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যেখান থেকেই আসুক, এদের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে দমন করা উচিত। এদের প্রতিরোধ করতে না পারলে করোনার ঝুঁকি বাড়বে।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সীমান্তে পুশইনের সুযোগ নেই। জেলার সীমান্ত এলাকাগুলোয় বিজিবির টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের আনাগোনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পঞ্চগড়-২ আসনের এমপি ও রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, তারা যেন সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতির কারণ না হয়, সে জন্য ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত রয়েছে এসব মানুষকে সুস্থ এবং স্বাভাবিক করে পুনর্বাসন করা। ছিন্নমূল এসব মানুষকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহায়তায় পুনর্বাসনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।