বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতির অস্ত্রোপচারের পর পেটের ভেতর গজ রেখে সেলাই দেয়ার ঘটনায় হাসপাতালের অবৈতনিক চিকিৎসক মো. তাহেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হাসপাতালের নার্স সুমী সরকার ও মিঠু রানী দাসকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, এক প্রসূতির পেটে গজ রেখে সেলাই দেয়ার ঘটনায় ২২ মে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. নাজিমুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন গাইনি বিভাগের প্রধান খুরশীদ জাহান ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন।
১১ জুন বিকেলে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি প্রমাণ হওয়ায় হাসপাতালের অনারারি মেডিকেল অফিসার মো. তাহেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তিনি এমবিবিএস পাস করে হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।
এ ঘটনায় হাসপাতালের দুজন স্টাফ নার্সকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. নাজিমুল হক জানান, দীর্ঘ তদন্তে দেখা গেছে শারমিনের অস্ত্রোপচার শেষে পেট সেলাই দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন ডা. তাহের এবং স্টাফ নার্স মিঠু রানী ও সুমী সরকার। তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই প্রসূতির পেটে গজ রয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পর শনিবার ওই তিনজনকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন হাসপাতালের পরিচালকের হাতে দেয়া হয়। আজ (রোববার) তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন হাসপাতালের পরিচালক।
১৬ এপ্রিল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার জিয়াউল হাসানের স্ত্রী শারমিন আক্তার শীলা। অস্ত্রোপচারের পর তার পেটে গজ রেখেই সেলাই করে দেন চিকিৎসক।
শারমিন বাড়ি ফেরার কিছুদিন পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ধীরে ধীরে সেখানে পচন ধরে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ব্যথা অনুভব করতে থাকেন। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তাকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. নাজিমুল হক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানান, শারমিনের পেটের ভেতর গজ রয়ে গেছে। ২২ মে পুনরায় অস্ত্রোপচার করে তা অপসারণ করা হয়। শারমিনের পেটে দীর্ঘদিন গজ থাকায় পেটের ভেতরে পচন ধরে নাড়ি ফুটো হয়ে যায়।