বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বলে দাবি করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
এই সময়ে পদ্মা সেতুর জমকালো উদ্বোধনের পরিকল্পনা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছেন তিনি। একে ‘আদিম অরণ্যের উল্লাস’ বলেছেন তিনি।
রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখছিলেন রিজভী। খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, বিদেশে উন্নত সুচিকিৎসা ও সুস্থতা কামনায় এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবক দল।
শনিবার প্রথম প্রহরে চতুর্থবারের মতো হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়ার হার্টে রিং পরানোর কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার স্বজনরা দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন।
তাদের নেত্রীর এই শারীরিক অবস্থার সময় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আয়োজনের সমালোচনা করেন রিজভী। বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার জীবন বিপন্ন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। অথচ শেখ হাসিনা উল্লাস করছেন। শেখ হাসিনার উল্লাস আদিম-অরণ্যের উল্লাস। আদিমকালে শিকারকে আঘাত করে, তাকে কবজায় নেয়ার পর শিকারি যেভাবে উল্লাস করত, সেই আদিম উল্লাস করছেন শেখ হাসিনা। গোটা জাতিকে বন্দি করে, গোটা জাতির বাকস্বাধীনতাকে বন্দি করে, গোটা জাতির মৌলিক অধিকারকে বন্দি করে শেখ হাসিনা এখন উল্লাস করছেন পদ্মা সেতু দেখিয়ে।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘নেত্রী জটিল সমস্যায় ভুগছেন। লিভারের জটিল সমস্যা, কারাগারে নেয়ার আগে চোখে অপারেশন হয়েছিল। সেই জরাজীর্ণ কারাগার, পুরোনো বিল্ডিংয়ের ধুলোবালি তার অপারেশন করা চোখে পড়েছে। এটাও একটা নির্যাতন।
‘তারপর করোনা আসল, সেই করোনার মধ্যেই তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। তারপর ভুগলেন ভয়াবহ করোনায়। এর মধ্যে গতকাল আমরা জানলাম তার হার্ট অ্যাট্যাক হয়েছে। তাহলে বুঝুন কী রকম শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে তিনি পড়েছেন। আমি গতকাল দেখতে গিয়েছিলাম, দূর থেকে দেখেছি। দেশনেত্রীকে চেনা যায় না।
‘পরিস্থিতি যখন এই, তখন কী বার্তা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী? পদ্মা সেতু নিয়ে কত আয়োজন করা হবে। কত জৌলুশ করা হবে। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে জেলায় জেলায় উৎসব করা হবে। কারণ, তার মনের মধ্যে আনন্দ। একনায়ক শাসকের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী যদি খুব খারাপ অবস্থায় থাকে, জীবন যন্ত্রণার শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে থাকে, তখন এটা তাদের জন্য আনন্দের হয়। শেখ হাসিনা সেই আনন্দই করছেন।’
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মনে হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জন্য যে সেতুটি, সেটি একবারে নিজের (প্রধানমন্ত্রীর) পৈতৃক টাকা থেকে তিনি বানিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু একবারও তিনি বললেন না যে এটা অল্প টাকায় বানানো যেত।’
পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার পেছনে মন্ত্রী, উপদেষ্টারা ঘুষ দাবি করেছিল বলেও দাবি করেন রিজভী। দাবি করেন, নিজ অর্থে সেতু নির্মাণের দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে চীনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নেয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক সবচেয়ে অল্প সুদে প্রকল্পে অর্থায়ন করে। এখন চীনের কাছ থেকে চড়া সুদ নিয়ে এতদিনে পদ্মা সেতু তিনি করেছেন। এই চড়া সুদের কারণে প্রায় ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে নবজাতক শিশু তার মায়ের পেট থেকে জন্ম নিচ্ছে। এটা শেখ হাসিনার অবদান। গোটা জাতিকে, নবজাতক শিশুকে তিনি ঋণগ্রস্ত করেছেন।
‘সারা দেশের মানুষ এখন ঋণগ্রস্ত। মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষরা আগে যে টাকায় পণ্য কিনতে পারতেন, এখন তা পারবেন না। সাধারণ মানুষ চোখে অন্ধকার দেখছে। বৈশাখের ঝড়ের আগে যে ঘন অন্ধকার হয়, মানুষ চোখে চোখে সেই অন্ধকার দেখছে।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার।