শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় পাহাড়ী ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। আর পানি যতো নামছে, ততই ভেসে উঠছে ওই এলাকাটির বিধ্বস্ত রাস্তা-ঘাট, সেতুসহ ক্ষয়ক্ষতির নানা চিত্র।
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ জানান, পাহাড়ি ঢলে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থান এবং উপজেলার গ্রামীণ ও পাকা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঢলের পানির প্রবল তোড়ে ভেসে গেছে ১৮০ ফুট এলজিইডির পাকা সড়ক, দেড় কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, মহারশি নদীর বাঁধের একাধিক স্থানের দেড় কিলোমিটার এবং সোমেশ্বরী নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থানের এক কিলোমিটার অংশ।
এ ছাড়া অর্ধশত কাঁচা ও আধাপাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে সদর উপজেলার বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ ২০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল। এতে ঝিনাইগাতী সদর, কাংশা ও ধানশাইল ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তবে এসব এলাকার পানি বর্তমানে নামতে শুরু করেছে।
দেখা গেছে, সোমেশ্বরীর শাখা নদী পাড়ের একটি রাস্তা এবং ওই নদীর ওপর নির্মিত একটি কাঠের সেতু পাহাড়ী ঢলে ভেসে গেছে। অপর প্রান্তে ভাঙা রাস্তার ওপর নির্মিত বাঁশের সাকোটিরও কোনো হদিস নেই। এতে উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের ৬ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই পায়ে হেঁটে, কেউ কেউ সাঁতরিয়ে কিংবা নৌকা ব্যবহার করে নদী পার হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজগুলো তো বন্ধই রয়েছে।
পানির তোড়ে এভাবেই সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেসে গেছেএ ছাড়াও আহম্মেদনগর-দীঘিরপার সড়ক, গুরুচরণ দুধনই-পানবর সড়ক ও রামেরকুড়া সড়কসহ অন্তত ১০টি স্থানে বেশ কয়েক জায়গায় সড়ক ভেঙে ওইসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে হাজারও মানুষকে চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
দুর্ভোগের বিষয়ে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে মহারশি নদীর পানি বাড়লেই বাঁধ ভেঙে আমাদের উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ ঝিনাইগাতী বাজার ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এতে পরিষদের কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমরা প্রতিবছর বাঁধ মেরামত করি। কিন্তু এখানে একটি স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা করলে সবাই ক্ষতির হাত থেকে বাচঁবে।’
এদিকে ঢলের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান তলিয়ে শতাধিক পুকুরের কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে খামারিরা দাবি করছেন। তবে পাহাড়ি ঢলের পানিতে কৃষির তেমন কোন ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক জানান, শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে ছোট-বড় দেড় শতাধিক মাছের প্রজেক্ট ভেসে গেছে। এতে মাছ ও অবাকাঠামোসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ঝিনাইগাতি উপজেলার প্রায় দেড় শতাধিক মাছের প্রকল্প ভেসে গেছেতবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির দিলদার জানান, এবার আগে-ভাগে কেটে ফেলায় ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে ৬ হেক্টর জমির সবজি পানির নিচে ছিল। আর পানি যেহেতু দ্রুত নামছে। তাই কিছু সবজির একটি অংশ টিকে যেতে পারে।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী শুভ বসাক বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে এলজিইডির মাধ্যমে ভাঙনকবলিত ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতে কাজ শুরু করা হবে।’
ঝিনাইগাতীর ইউএনও ফারুক আল মাসুদ বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ হওয়ার পথে। উপজেলার দুই কিলোমিটার কাঁচা পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এসব ভাঙা সড়ক ও ব্রিজ কালভার্ট দ্রুত মেরামত করা হবে। যেখানে যে অবস্থা ছিল, সে অবস্থায়ই ফিরিয়ে আনা হবে।’
এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারের মাঝে বিতরণের জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ টন জিআর-এর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও জানান ইউএনও।
এদিকে, উজানে পানি কমলেও শনিবার সকাল থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ও হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ১০ গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।