দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে আগামী অর্থবছরের বাজেট সবদিক থেকে জনগণকে চাপে ফেলবে বলে মনে করেন বিএনপির দুজন শীর্ষ নেতা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট প্রস্তাব করার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এই প্রতিক্রিয়া জানান। তাদের দাবি, প্রস্তাবিত বাজেটে লুটপাটের সুযোগ দেয়া হয়েছে, যার বলি হবে জনগণ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বনানীতে নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘এই যে এত বড় একটা বাজেট দিয়েছে। এটা বাস্তবায়ন করতে গেলে দিন শেষে টাকা তো জনগণের পকেট থেকেই যাবে। অন্যদিকে জনগণকে সহযোগিতা করার জন্য যে টাকা সরকারের তহবিলে থাকার কথা, সেই টাকা আজকে নেই বলে চাপটা আরও বেড়ে যাবে।’
বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তারও সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘বাজেটের অর্ধেকের বেশি টাকা তারা দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। অথচ এই টাকা দিয়ে দেশে আরও চার-পাঁচটা পদ্মা সেতু করা যেত। সামাজিক সুরক্ষা বলয় বাড়ানো যেত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য ব্যয় করা যেত।
‘বিভিন্নভাবে যে ট্যাক্সের কথা বলা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের পকেট থেকে যাচ্ছে। ভ্যাট, উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিলের মাধ্যমে যাচ্ছে। মানুষ সবদিক থেকে আক্রান্ত।’
এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ ‘বাস্তবতা বর্জিত’ বাজেট বলে মন্তব্য করেন দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান।
তিনি বলেন, ‘এমন একটি বাজেট উপস্থাপন করেছে, যা দেশের মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষায় তৎপর হয়েছে। এতে লাভবান হবে সরকারসংশ্লিষ্ট একটি বিশেষ গোষ্ঠী। অন্যদিকে নতুন বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরও চরম অবস্থায় পতিত হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী।’
বিএনপি নেতার মতে, সরকারি মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কিছু বেশি। কিন্তু বাস্তবে সেটা ১২ শতাংশ। এই বাজেটে এই পরিস্থিতি আরও নাজুক আকার ধারণ করবে। ডলারের বিপরীতে স্বল্পতম সময়ে টাকার অবমূল্যায়ন ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। এই বাজেটে তার কোনো সমাধান নেই।
বাজেটে ৩৬ শতাংশের বেশি ঘাটতির চাপও দরিদ্র জনগণের ওপরেই পড়বে বলেও মনে করেন বিএনপি নেতা।
করপোরেট কর কমলেও করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকার বেশি না বাড়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন মঈন খান।
উন্নয়ন বাজেট ও রাজস্ব বাজেটের অনুপাতের বিষয়টিও তুলে ধরেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, উন্নয়ন বাজেটের সিংহভাগ নিয়েছে ভৌত অবকাঠামোর মেগা প্রজেক্টগুলো। পাশাপাশি অনুন্নয়ন ব্যয়ের পরিমাণ ৪ লাখ কোটির ওপর। রাজনৈতিক সরকারকে টিকিয়ে রাখতে প্রশাসন ও সাপোর্ট সিস্টেমকে খুশি রাখতে এটি করা হয়েছে।
বাজেটে লাখ কোটি টাকার ভর্তুকি কার পকেটে যায়- সে প্রশ্নও রাখেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতে দেখেছি, কীভাবে একই টেলিফোন নম্বরে কতবার প্রণোদনা যায়, কার কাছে যায়। এগুলো এখন মানুষের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট।’
গত দুই বছরে যে লক্ষ কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল সে টাকা কোথায় গেল, সে প্রশ্নও রাখেন মঈন খান। বলেন, ‘তার মধ্যে একটি টাকাও কি পরিশোধ করা হয়েছে? জনগণ জানতে চায়।
‘শুনি রপ্তানি নাকি হু হু করে বাড়ছে। তাহলে প্রণোদনার টাকা পরিশোধ হচ্ছে না কেন? কারা কারা এই প্রণোদনা পেয়েছে ও কী পরিমাণ পরিশোধ করেছে, তার ওপর সরকারের শ্বেতপত্র চায় জনগণ।’