রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক সার্জেন্টসহ তিন পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় দুই আইনজীবীসহ ৫ জনকে তিন দিন করে রিমান্ড আদেশ দিয়েছে আদালত।
বুধবার তাদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্যামপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ।
মামলার আরেক আসামি ইয়াসিন জাহান নিশাত ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করেনি পুলিশ। তবে তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করলেও তাকে জামিন দেন বিচারক ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেন।
ঢাকার পুলিশ প্রসিকিউশন প্রধান উপ-কমিশনার মো. জাফর হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার জুরাইনে এক নারী পুলিশের বিরুদ্ধে লাঞ্ছিতের অভিযোগ তুলে চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন তিন পুলিশ সদস্যকে মারধর করে। পরে সেখান থেকে আটক করা হয় ওই নারী, তার স্বামীসহ ৬ জনকে। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মোটরসাইকেলের চালক সোহাগ উল ইসলাম রনি প্রথমে নিজেকে একটি পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিলেও জামিন আবেদনে তাকে আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া রিমান্ডে নেয়া হয়েছে রনির শ্যালক ইয়াসিন আরাফাত ভুঁইয়া, শরিফ, নাহিদ ও রাসেল।
পুলিশ দাবি করে, জুরাইন রেলগেট দিয়ে উল্টোপথে আসা একটি মোটরসাইকেলকে গতিরোধ করলে সার্জেন্ট আলী হোসেনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান মোটরসাইকেলের চালক রনি ও তার স্ত্রী ইয়াসিন জাহান নিশাত। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে লোকজন জড়ো হওয়ায় ওই এলাকার ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) বিপ্লব ভৌমিক কয়েকজন কনস্টেবল নিয়ে এসে তাদের সবাইকে মীমাংসার জন্য সড়কে থাকা ট্রাফিক পুলিশ বক্সে নিয়ে যান। এ সময় ফোন করে নিশাত বিষয়টি তার ভাই ইয়াসিন আরাফাতকে জানালে লোকজন গিয়ে পুলিশ বক্সে হামলা করে ও তাদের মারধর করে।
পরে আহত পুলিশ সদস্যদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। সার্জেন্ট আলী হোসেন ছাড়াও হামলায় আহত অন্য পুলিশ সদস্যরা হলেন ট্রাফিক কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম, শ্যামপুর থানার উপ-পরিদর্শক উৎপল চন্দ্র ও এসআই সাকিব।
পরে ওয়ারী ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট আলী হোসেন বাদী হয়ে শ্যামপুর থানায় ৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১ থেকে ২ হাজার জনের নামে মামলা করেন।
বুধবার দুই আইনজীবী এবং অন্যদের পক্ষে জামিন চান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী নজিবুল্যাহ হীরু, সাইদুর রহমান মানিক, আব্দুর রহমান সরদার, মিজানুর রহমান মামুন, ফিরোজুর রহমান মন্টুসহ অন্য আইনজীবী নেতারা।
শুনানির সময় ৪ পুলিশ সদস্যের সহায়তায় রনিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তার শারীরিক অবস্থা খুব ভালো ছিল না। নিশাতের অবস্থা স্থিতিশীল ছিল এবং তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে জানান।
এ সময় এজলাস ও আদালত প্রাঙ্গনে হইচই করে প্রতিবাদ জানান অন্য আইনজীবীরা।
আইনজীবীদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ড চাওয়ায় আদালত প্রাঙ্গনে শত শত কনিষ্ট আইনজীবী জমায়েত হন। তারা এজলাসে হইচই করতে শুরু করেন।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা তাদের শান্ত থাকলে বললেও তারা নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের পুরানো ভবনের নীচেও আদালতের বারান্দায় আইনজীবীরা স্লোগান দিতে থাকলে একপর্যায়ে আদালত ভবনের প্রবেশ পথের কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়া হয়।