শরীয়তপুরের জাজিরায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সাবেক প্রধান শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
জাজিরা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর খোসাল শিকদার কান্দি গ্রামে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
৪৬ বছর বয়সী নিহত সাইফুল রহমান মালতের বাড়ি উত্তর খোসাল শিকদার কান্দি গ্রামে। তিনি বিএম মোজাম্মেল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে দীর্ঘদিন ধরে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ইলিয়াস ও জাজিরা উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম মাদবরের মধ্যে বিরোধ চলছে। সাইফুল ইলিয়াসের পক্ষে কাজ করতেন।
আধিপত্য বিস্তারের জেরে ২৯ মে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর সেলিমের সমর্থক বাবুল মাতবর ইলিয়াসের ১২ জন সমর্থকের নামে মামলা করেন। মঙ্গলবার এ বিষয়ে সাইফুল আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং আসামিদের জামিনের কাগজ নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
বিএম মোজাম্মেল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সাইফুল রহমান মালত
রাত ১০টার দিকে সাইফুল তার প্রতিবেশী হিরু শেখের সঙ্গে জাজিরা পুরান বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে ব্রিজের ঢালে সেলিমের সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা করে।
তারা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সাইফুলকে কুপিয়ে রক্তাক্ত এবং হিরুকে মারধর করে। হিরু পাশের নদীতে লাফ দিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন।
স্থানীয়দের সহায়তায় স্বজনরা সাইফুলকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় পাঠান। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাইফুলের মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর খবর পেয়ে ইলিয়াসের সমর্থকরা রাত ২টার দিকে উত্তর খোসাল শিকদার কান্দি গ্ৰামের মালেক মোল্লার বাড়িতে আগুন দেয়।
হিরু শেখ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজার থেকে সাইফুল মালতের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলাম। খোসাল কান্দি গ্ৰামের ব্রিজের ঢালে পৌঁছামাত্র আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকজন আমাদের ওপর হামলা করে। হামলাকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আমি চিনতে পেরেছি।’
সাইফুলের স্ত্রী সাথী আক্তার বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ করি। তারপরও কেন আমার স্বামীকে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা মেরে ফেলল। শুধু দলের এক নেতার সমর্থক বলে মেরে ফেলতে হবে? আমার সন্তানদের এখন কী হবে? ওদের নিয়ে আমি কার কাছে আশ্রয় নেব?’
এ বিষয়ে যোগাযোগের জন্য সেলিমকে ফোন দেয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে ইলিয়াছ বলেন, ‘কারা সাইফুলকে হত্যা করেছে তা পুলিশ জানে। সাইফুলের পরিবার পুলিশকে তাদের নাম বলেছে। আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’
ওসি মোস্তাফিজুর জানান, আগুন দেয়ার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি। তবে হত্যার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এরপর তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।