শেরপুরের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুনে নিহত ফায়ার ফাইটার রমজানুল ইসলাম রনির দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের বালুরঘাট গ্রামে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে রনির দাফন সম্পন্ন হয়। প্রায় দুই হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজার আগে শেরপুরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপ-সহকারী পরিচালক জাবেদ হোসেন তারেকের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেয়া হয় রনিকে।
এর আগে সকাল ৬টার দিকে পরিবারের সদস্যরা মরদেহ শনাক্ত করে বাড়িতে নিয়ে আসে। রনির অকাল মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়িতে শোকের আবাহ দেখা যায়।
চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম রেজা বলেন, ‘রনি ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তাকে গ্রামের মানুষ অত্যন্ত ভদ্র হিসেবে জানতো। তার মৃত্যুতে গ্রামবাসী শোকাহত। জানাজায় প্রায় দুই হাজার মানুষ উপস্থিতি ছিল।’
গত শনিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন ও বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৪৩ জন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। আগুনে নিহতদের মধ্যে যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিস সদস্য শনাক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে রমজানুল ইসলাম রনি একজন।
রনির পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি ফায়ার সার্ভিসে ২০২০ সালে যোগ দেন। গ্রামের দলিল লেখক আবুল আঙ্গুরের বড় ছেলে রনি। সর্বশেষ পোস্টিং ছিল সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনে। রনি তার স্ত্রীকে নিয়ে তিন মাস ধরে সেখানেই ভাড়া থাকতেন।
ঘটনার রাতে রনির ডিউটি ছিল রাত ২টা থেকে চারটা পর্যন্ত। রাত ১১টার সময় ফায়ার অ্যালার্ম শোনার পর ফায়ার সার্ভিসের দেয়া সাদা গেঞ্জি পরে বেরিযে যায় রনি। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে তার এক খালাতো ভাই হাসপাতালে খোঁজ নিতে গিয়ে রনিকে চিনতে পেয়ে তার স্ত্রীকে ফোন করে। পরে রনির স্ত্রী রূপা আক্তার তার পরনের গেঞ্জি দেখে তাকে শনাক্ত করে। আজ সকালে মরদেহ গ্রামের বাড়ি আনা হয়।
রুপা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী মারা গেল, আমি এখন কি করে চলমু। মাত্র ৬ মাস আগে আমাগো বিয়ে হইছে। এহন আমার যদি একটা ছেলে বা মেয়ে থাকত তাহলে ওর দিকে তাকাইয়া থাকতাম, তাও তো নাই।’
‘আমি ডিপ্লোমা কমপ্লিট করেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন যদি আমার একটা কর্মের ব্যবস্থা করে দেন তাহলে আমি চলতে পারি।’
শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক জাবেদ হোসেন তারেক বলেন, ‘আমরা রনির পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সবসময় তার পরিবারের পাশে থাকব।’