চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার পর বন্দরে পড়ে থাকা ৬০৯ ড্রাম হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নিলামে বিক্রি করেছে কাস্টম হাউস।
নিলাম ডেকে সোমবার এসব রাসায়নিক ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান কাস্টম হাউস চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার আলী রেজা হায়দার।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্দরের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ঝুঁকিপূর্ণ এসব রাসায়নিক স্পট নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণের পর এগুলো নিয়ে বন্দর ও আমরা চিন্তিত। এগুলোর পর আমাদের আর কোনো হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকবে না। আরও কিছু ছিল, সেগুলো গত ২৫ মে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।
‘গাজীপুরের কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান দুটি কনটেইনারে এসব রাসায়নিক চার বছর আগে তুরস্ক থেকে আমদানি করে বন্দর থেকে খালাস করেনি। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় এগুলো নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।’
তিনি জানান, ড্রামগুলোর গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণের লেবেল পাওয়া যায়নি। নিলামে যারা বিড করেছেন, তাদের বিষয়টি জানিয়ে স্যাম্পল দেখানো হয়েছে।
সর্বোচ্চ দর হাঁকিয়ে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় ইয়াকুব ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব কিনে নিয়েছে। ১৭ শতাংশ ভ্যাটসহ মঙ্গলবার সম্পূর্ণ টাকা জমা দিয়ে রাসায়নিকগুলো তারা নিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
সীতাকুণ্ডের ওই ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণে সোমবার পর্যন্ত ৪১ প্রাণহানির তথ্য জানিয়েছে প্রশাসন।
আগুনের ভয়াবহতা আর বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ডিপোর কনটেইনারে থাকা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডকে দায়ী করেছে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস। এই রাসায়নিক অ্যাভিয়েশন শিল্প খাতে ব্যবহার করা হয়। উচ্চ চাপে এই রাসায়নিক বোতলজাত করা হয়ে থাকে। রপ্তানির জন্য কনটেইনারে করে এই রাসায়নিক বিএম ডিপোতে রাখা ছিল।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ডিপোর কর্মকর্তাদের বরাতে আমরা জানতে পেরেছি, কনটেইনারগুলোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল। তবে প্রথমে আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের কেউ অবহিত করেনি। এমন রাসায়নিকের আগুন নেভাতে হয় ফগ সিস্টেমে।’
যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার (সিডিসি) তথ্যানুযায়ী, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। বিশুদ্ধ অবস্থায় এই দ্রব্য বর্ণহীন তরল। এটা অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ।
নিরাপত্তাজনিত কারণে সব সময় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। এটি রকেটের জ্বালানিতে প্রোপেল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড উত্তপ্ত হলে তাপীয় বিয়োজনে বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে। তাই এটাকে কম তাপে নিরাপদে স্থানান্তর করা হয়।