ছিলেন পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তা। চিকিৎসক স্বামীর সঙ্গে রাজধানীর ওয়ারীর একটি ফ্ল্যাটে ছোট্ট সংসার ছিল তার। গর্ভে ছিল প্রথম সন্তান।
সেই সন্তানকে গর্ভে নিয়েই রোববার সকালে চিরনিদ্রায় ঢলে পড়লেন পূজা সরকার। পৃথিবী দেখার আগে মায়ের সঙ্গেই পৃথিবী ছাড়ল সন্তানও।
পূজা ছিলেন পরমাণু শক্তি কমিশনের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। সাভারে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ মাসের গর্ভাবস্থায় প্রাণ হারান তিনি।
তার সহকর্মী পরমাণু শক্তি কমিশনের টেকনিক্যাল কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
তিনি জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলেন পূজা। গাজীপুরে তার গ্রামের বাড়ি। তার বাবা সমর সরকার অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা।
বছর তিনেক আগে পরমাণু শক্তি কমিশন সাভারে থিসিস করেছিলেন পূজা। পরে সেখানেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তার চাকরি হয়। প্রায় একই সময় বিয়েও হয়। স্বামী তন্ময় মজুদার মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক হাসপাতালের চিকিৎসক। তাদের সংসার রাজধানীর ওয়ারীর ফ্ল্যাটে হলেও প্রায় পাঁচ মাস ধরে তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে ডরমেটরিতে বসবাস করছিলেন।
আতিকুর আরও জানান, সাপ্তাহিক ছুটিতে স্বামী-স্ত্রী ওয়ারীতে ছিলেন। রোববার সকালে অফিসের বাসে করে পূজা সাভারের দিকে রওনা দেন। পথে দুর্ঘটনায় আরও দুই সহকর্মীর সঙ্গে তারও মৃত্যু হয়। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় গাড়িচালকেরও।
পূজার সন্তানতুল্য ছিলেন জানিয়ে আতিকুর বলেন, ‘উনি আর আমি একই রুমে, এক জায়গায় বসতাম আরকি। দেড় মিটারের মতো দূরত্ব হবে আমাদের টেবিলের পার্থক্য। ওনার সন্তান কনসিভ হওয়ার ১৫ দিন পর আমাকে জানিয়েছিলেন। অনাগত সন্তানকে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন পূজা।’
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি ফিটনেসবিহীন ছিল জানিয়ে আতিকুর বলেন, ‘ওই গাড়িগুলো আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব না। বছরে ভাড়ায় নেয়া। ওই গাড়িটায় আমাদের স্টাফরা যাওয়া-আসা করতেন। ইদানীং প্রায় আমাকে উনি (পূজা) কমপ্লেইন করতেন। বলতেন, কাকা গাড়ি ড্রাইভার ভালো চালায় না। সব সময় কমপ্লেইন করতেন যে গাড়ি এলোমেলো চালায়, কথা শোনে না।
‘পরে আমিই তাকে বলেছি ডরমেটরিতে চলে আসতে। অত্যন্ত বাজে কন্ডিশনের গাড়ি। খটমট খটমট করে চালায়। মাঝে মাঝে বিকল হয়ে যেত আবার চলত। অফিশিয়ালভাবেই আমাদের ডাইরেক্টর জেনারেলের কাছে এ বিষয়টা নিয়ে কমপ্লেইন করা আছে। এটা দেখার জন্য আলাদা একটা সেল আছে। যেটা প্রশাসনের ব্যাপার। হয়তো ওনারা খেয়াল করেন নাই।’
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বলিয়ারপুর এলাকায় সকাল ৯টার দিকে দুই বাস ও একটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এর মধ্যে একটি বাস ছিল পরমাণু শক্তি কমিশনের। তাতে থাকা অন্তঃসত্ত্বা পূজা, পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান, সহযোগী ইঞ্জিনিয়ার কাউসার আহমেদ রাব্বী ও বাসের চালক রাজীব হোসেন নিহত হন। আহত হন অন্তত ১৫ জন।
নিহতদের মধ্যে আরিফুজ্জামান ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫তম আবর্তনের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের ছাত্র।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান রোববার দুপুরে নিউজবাংলাকে এসব জানান।
তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এনাম মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ফারহানা ইসলাম নামে জাবির আরেক সাবেক ছাত্রী।