পলাতক আসামির পক্ষে কোনো মামলা শুনবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে হাইকোর্ট।
পলাতক আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী আবেদন নিয়ে এলে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে রুল ইস্যু করা হবে বলেও আদালত মন্তব্য করে।
রোববার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে।
এই বেঞ্চের কার্যতালিকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের মামলাগুলো রয়েছে।
আদালতের মন্তব্যের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
রোববার সকালে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে পলাতক দেখিয়ে আপিল বিভাগের রায়ের কপি হাইকোর্টে জমা দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
এর আগে ১ জুন তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে পলাতক ঘোষণা করে রায় দেয় আপিল বিভাগ।
বুধবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই রায় দেয়।
রায়টি লিখেছেন বিচারক বোরহানউদ্দিন। রায়ে একমত হয়েছেন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারক মো. নূরুজ্জামান ও বিচারক এম ইনায়েতুর রহিম।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের অবৈধ সম্পদ অর্জনের দুটি মামলা নিয়ে এই আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘জোবায়দা রহমানের একটা আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করে দিয়েছেন৷ এ-সংক্রান্ত একটা রায় আজকে প্রকাশ হয়েছে।
‘আপিল বিভাগ তার রায়ে জোবাইদা রহমানকে আইনের দৃষ্টিতে পলাতক বলেছেন। আর পলাতক অবস্থায় তার আবেদন শোনা ঠিক হয়নি। পলাতক আসামি কোনো আদালতে হাজির না হয়ে আবেদন করতে পারবেন না।’
আত্মসমর্পণ না করে সরাসরি হাইকোর্টে আবেদন করতে তিনি পারেন না। এ ঘটনাকে নজিরবিহীন বলেও উল্লেখ করেছে আদালত।
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। অথচ দেখা গেছে, সেই সুবিধা তাকে দেয়া হয়েছে। কাজেই অ্যাপেক্স কোর্টের দায়িত্বই ছিল এটা।’
আদালতে আত্মসমর্পণ না করে কীভাবে হাইকোর্ট এ মামলা শুনল তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
রায়ে বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতির মামলায় জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়নি বিচারিক আদালত। যেখানে অভিযোগ আমলে নেয়নি, সেখানে কী করে উনি মামলা বাতিল চেয়ে ৫৬১ক ধারায় আবেদন করেছেন। আর যখন আবেদনটি করেছেন তখন উনি আইনের দৃষ্টিতে পলাতক। আইনের দৃষ্টিতে একজন পলাতক ব্যক্তির করা ওই আবেদন শুনে মামলার বিচারকাজ স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করেছে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। আমরা মনে করি, হাইকোর্টের এ ধরনের আদেশ প্রদান আইনানুযায়ী সঠিক ছিল না। কারণ আইনের দৃষ্টিতে পলাতক ব্যক্তির আইনি প্রতিকার চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
আপিল বিভাগ রায়ে বলেছে, ‘সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে ও পক্ষপাতিত্বের আশ্রয় না নিয়ে বিচারকাজ পরিচালনার শপথ নিয়েছেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগ এই নীতিতে অবশ্যই অটল থাকবে। বিচার বিভাগ এমন কোনো নজির সৃষ্টি করবে না, যা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।’
১৬ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়েছে, হাইকোর্ট এ মামলাটি এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে শুনেছিল।
শত বছরের নজির ভেঙে জোবাইদা রহমানের মামলাটি শুনেছে বলেও উল্লেখ করে আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের দেয়া আট সপ্তাহের জোবাইদা রহমানকে আত্মসমর্পণের আদেশ বাতিল করে রায় দেয় প্রধান বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
২০০৮ সালে হাইকোর্ট জোবায়দা রহমানের আবেদন শুনে আদেশ দিয়েছিল।
ঘোষিত আয়ের বাইরে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর কাফরুল থানায় ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এ মামলা করা হয়।
মামলায় তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়।
একই বছর তারেক রহমান ও তার স্ত্রী আলাদা রিট আবেদন করেন। রিটে জরুরি আইন ও এই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্ট রুল জারি করে স্থগিতাদেশ দেয়।
রুল জারির ১৫ বছর পর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ এপ্রিল রিট মামলা হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে। এরপর হাইকোর্ট রুল শুনানির জন্য ২০ এপ্রিল দিন ঠিক করে। ওই দিন তারেক ও জোবাইদার পক্ষে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়।