বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘খালি চোখে দূষণ মাপি কী করে?’

  •    
  • ৫ জুন, ২০২২ ১১:০৪

যানবাহনের কালো ধোঁয়া দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না ট্রাফিক বিভাগ। তাদের বক্তব্য, পরিবেশ অধিদপ্তর কালো ধোঁয়ার গ্রহণযোগ্য মান বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু তা মাপার কোনো যন্ত্র তাদের কাছে নেই।

আইকিউ এয়ার নামক ওয়েবসাইটের হিসাবে গত শনিবার বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা শহরগুলোর মধ্যে ১৫তম অবস্থানে ছিল রাজধানী ঢাকা। রাজধানীর বায়ুদূষণের ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া, যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং উন্নয়নমূলক অবকাঠামো নির্মাণকাজকে দায়ী করা হয়। এর বাইরেও শিল্প-কারখানাগুলোকেও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়।

রোববার বিশ্ব পরিবেশ দিবস। প্রতি বছরই নানা কর্মসূচি দিয়ে এই দিবসটি পালিত হয় বাংলাদেশে। এ বছর জাতিসংঘ দিনটির প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে ‘অনলি অন আর্থ: লিভিং সাসটেইনেবিলিটি ইন হারমনি উইথ নেচার’। বাংলা অর্থ: একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন। একই সঙ্গে ৫ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশ মেলা ও ৫ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা করছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

বায়ুদূষণ রোধে সরকার ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হলেও গাড়ির কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলছে, কালো ধোঁয়া পরিমাপের যন্ত্র না থাকায় যানবাহনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে রাজধানীর বায়ুদূষণের অন্তত ৪০ ভাগের জন্য দায়ী যানবাহনের কালো ধোঁয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও বায়ুদূষণ বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক আবদুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বায়ুদূষণের একটি বিরাট অংশ যানবাহন থেকে আসে। আমরা যে তিনটি মেজর সোর্স ধরি বায়ুদূষণের, তার মধ্যে আছে কালো ধোঁয়া, ব্রিক ফিল্ড এবং কনস্ট্রাকশন। গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে যেটা আসে এটা প্রায় ৪০ শতাংশ।

‘কালো ধোঁয়া মূলত দুই কারণে বের হয়। গাড়ি যত পুরাতন হতে থাকে, এর কর্মক্ষমতাও কমতে থাকে। গাড়িতে যে তেল ব্যবহার করা হয়, সেটা থেকে তার এনার্জি তৈরি হয়। কিন্তু গাড়ির কর্মক্ষমতা কমে গেলে এই তেলটা কমপ্লিট বার্ন হয় না বা কনভার্সন হয় না। যখনই এটা হয় না, তখনই তার একটি অংশ একজস্টের সঙ্গে বের হয়ে আসে। এটাকে বলে ইনকমপ্লিট কনভার্সন।’

তিনি বলেন, ‘গাড়ির একটি রেগুলার মেইনটেন্যান্স প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি হলো নিয়মিত প্রতি ৩ হাজার কিলোমিটার চলার পর লুব্রিক্যান্ট অয়েল পরিবর্তন করা। এটা করা হয় না। এ কারণে গাড়ির যে লুব্রিকেটিং ফাংশন, এটা ঠিকভাবে কাজ করে না। সেখান থেকে পলিউশন হয়।

‘আবার যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, সেটাও অনেক সময় ভালো মানের থাকে না। এটাও দূষণের কারণ। মূলত এই কারণগুলোই কালো ধোঁয়া তৈরির জন্য দায়ী। কালো ধোঁয়ার একটি বড় অংশ হলো টক্সিক কার্বন। এটা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং মানুষের ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ। এতে থাকে অনেক ক্ষতিকর উপাদান যেমন- হাইড্রোকার্বন, কার্বন মনোক্সাইড এবং জ্বালানি তেলের আনবার্ন্ট কিছু অংশ। এগুলোর প্রতিটি খুবই ক্ষতিকর।’

মাপার সুযোগ নেই, তাই পদক্ষেপও নেই

বায়ুদূষণের জন্য দায়ী এই কালো ধোঁয়ার বিষয়ে সড়কে খুব কমই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়। সড়কে চলাচল করা ডিজেলচালিত বাস, ট্রাক, পিকআপ বা সরকারি মালিকানাধীন গাড়িগুলো এই কালো ধোঁয়ার প্রধান উৎস।

কালো ধোঁয়া ছড়ানো যানবাহনগুলোর বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যানবাহনের কালো ধোঁয়ার কারণে অ্যাকশন নিতে হলে আমাদের ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্র লাগবে। সেটা আমাদের দেশের ট্রাফিক বিভাগের কাছে নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ধোঁয়ার মান নির্ধারণ করে দেয়া আছে, কিন্তু আমরা তো খালি চোখে সেটা মাপতে পারব না।

‘তাই দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে আমরা এই ব্যাপারে একেবারেই নিরুপায়। তবে ধোঁয়া ডিটেকটরের জন্য ট্রাফিক বিভাগ ইতোমধ্যে সরকারের কাছে আবেদন করে রেখেছে। যন্ত্র পেলে আমরা কালো ধোঁয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করতে পারব।’

ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে বাধ্যতামূলক হচ্ছে ব্লক ইট

দেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি সব অবকাঠামোতে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট ব্যবহারের নির্দেশ জারি করেছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। ধীরে ধীরে দেশ থেকে সনাতনী পদ্ধতিতে কাঠ পুড়িয়ে ইট উৎপাদন বন্ধ করতে চায় সরকার। একই সঙ্গে বায়ুদূষণ রোধে একটি বিধিমালা প্রণয়নের কার্যক্রমও হাতে নেয়া হয়েছে।

দূষণ রোধে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চাইলে পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘বায়ুদূষণ রোধে একটি বিধিমালা আগামী সংসদে পাস হলেই আমরা বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ নেব। আমরা ইতোমধ্যে সে কাজ করে যাচ্ছি। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিমাপক যন্ত্র আমরা বসিয়েছি।

‘এতে আমরা জানতে পারছি যে কোথায়, কী পরিমাণে দূষণ হচ্ছে। আমাদের উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। এই কাজের জন্য কিছু বায়ুদূষণ হয়। গাড়ির কালো ধোঁয়া, শিল্প-কারখানা ও ইটভাটাগুলো বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। ইটভাটাগুলোকে আমরা এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। নতুন আইন আমরা করেছি। ২০২৫ সালের পর সরকারি কোনো স্থাপনায় পুরোনো ইট ব্যবহার করব না। পুরোনো ইট বায়ুদূষণ করছে, মাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে এটা বন্ধের প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি। এর প্রজ্ঞাপনও আমরা জারি করেছি। আমরা ২০২৫ সালে ব্লক ইটে চলে যাব। এতে দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘গাড়ির কালো ধোঁয়ার বিষয়ে আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতায় একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর অধীনে কালো ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্র বসিয়ে সেটাকে মাপা হবে। এটার তথ্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে দেয়া হবে, যাতে সেই গাড়ি আর ফিটনেস না পায়। এ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’

সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৫১৬টি অভিযান পরিচালনা করে ২ হাজার ৫৯৪টি ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর মধ্যে ৮২৮টি অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ বা কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। আর জরিমানা আদায় করা হয়েছে মোট ৬২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর