গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে সিএনজিচালক মোজাম্মেল হোসেনকে হত্যা করে তার অটোরিকশাটি নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ৩ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর মোজাম্মেলকে হত্যার বর্ণনা দিয়েছে ওই ছিনতাইকারীরা।
শনিবার সন্ধ্যায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে শুক্রবার রাতে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ৩ জন হলেন- ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের আবুল মনসুরের ছেলে আবু রায়হান, সরিষা এলাকার নূর আহাম্মদ মিলনের ছেলে মোজাম্মেল হক এবং ধামদী গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে জিয়াউর রহমান সাইদুল। তাদের বয়স ১৯ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
মামলার বরাতে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মোজাম্মেল নান্দাইল উপজেলার সাভার এলাকায় থাকেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি।
পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোজাম্মেলের নম্বর থেকে তার বাবা ফরিদ মিয়ার মোবাইল নম্বরে একটি কল আসে। ওই কলে অপরিচিত কণ্ঠে ফরিদ মিয়াকে বিকাশে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে এক অপরিচিত কণ্ঠ।
টাকা পাঠাতে না পারলে মোজাম্মেলকে হত্যা করে অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ারও হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু আর্থিক দৈন্যতার কারণে তৎক্ষণাৎ টাকা যোগাড় করতে ব্যর্থ হন ফরিদ।
পরদিন সকাল ১০টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জের মৃগালী এলাকায় সড়কের পাশে মোজাম্মেলের মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে পুলিশকে খবর দিলে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
ওইদিনই এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করে মোজাম্মেলের পরিবার।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবিতে ন্যাস্ত করা হলে ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে ডিবি। অবশেষে সাড়ে তিন মাস পর সফলতা এসেছে। হত্যায় জড়িত তিন আসামিকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
গ্রেপ্তারের পর আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাতে ওসি জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নান্দাইল চৌরাস্তা থেকে যাত্রীবেশে মোজাম্মেলের সিএনজিটি ভাড়া করে তারা। পরে ময়মনসিংহ শহরে এসে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। রাত গভীর হলে ময়মনসিংহ থেকে আবার ঈশ্বরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়।
যাত্রাপথের এক পর্যায়ে মোজাম্মেলকে নিজেদের আসল উদ্দেশের কথা জানায় ছিনতাইকারীরা এবং সিএনজিটিরও নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা মোজাম্মেলকে এও জানায়, ২০ হাজার টাকা পেলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
পরে মোজাম্মেলের কাছ থেকে তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে তার বাবার কাছে ফোন দিয়ে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে ছিনতাইকারীরা।
কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও দাবি করা টাকা না পেলে সিএনজির ভেতরেই গলায় মাফলার পেঁচিয়ে নাক ও মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে মোজাম্মেলকে হত্যা করা হয়। পরে রাস্তার পাশে তার মরদেহটি ফেলে দিয়ে অটোরিকশা ও মোবাইল ফোনটি নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
ওসি বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার তিনজনকে ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এই ছিনতাই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’