ঢাকার আশপাশের চারটি নদ-নদীই ভয়াবহ দূষণের শিকার। আর এ জন্য এককভাবে ঢাকা ওয়াসাকে দায়ী করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, রাজধানী থেকে একই পাইপ দিয়ে মলমূত্র ও বৃষ্টির পানি নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করেছে ওয়াসা। এভাবে নদ-নদীর এই দূষণ মানবাধিকার লঙ্ঘন।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস সামনে রেখে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
কমিশন চেয়ারম্যান একই সঙ্গে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর আগেই বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী এবং টঙ্গী খাল দূষণমুক্ত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নদী রক্ষা কমিশন কাজ করছে।
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নদী দূষণে যদি কোনো একক প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয় তাহলে সেটি হবে ঢাকা ওয়াসা। ঢাকা শহরে যত মলমূত্র আছে, তার ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশই এই চারটি নদীতে যায়। এটা কীভাবে যায়? ওয়াসার দায়িত্ব ছিল এটা ঠিক করা।তিনি বলেন, রাজধানী থেকে একই পাইপ দিয়ে মলমূত্র, বৃষ্টির পানি ইত্যাদি নদীতে গিয়ে পড়ছে। ওয়াসার দায়িত্ব ছিল টয়লেটের ময়লাসহ পানি এবং গোসলখানাসহ অন্যান্য লাইনের পানি আলাদাভাবে বের হওয়ার ব্যবস্থা করা। সেটা তারা করেনি, বরং সবকিছু একই লাইন দিয়ে নদীতে সংযোগ দিয়েছে, এ কারণে নদী দ্রুত দূষণের শিকার হয়েছে।
ড. চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পানির অপর নাম জীবন। অথচ এখন এই পানিই আমাদের জন্য মরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মার্চে আমি ঢাকার উত্তরে নদী সফরে গিয়ে খুঁজেছি, কোথায় গেলে এমন একটি নদী পাব যেখানে মানুষ গোসল করছে।‘রাজধানী থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে গোসল করার মতো একটি নদী পাওয়া গেল, নাম সুচিয়া নদী। সেখানে দেখলাম, কিছু মানুষ গোসল করছে, কেউবা মাছ ধরছে। জানা গেল, আকিজ ফ্যাক্টরি বর্জ্য ফেলায় সেটিও দূষিত হয়ে পড়ছে।’
তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশ মিলে প্রায় চার কোটি মানুষ বসবাস করেন। এই চার কোটি মানুষের জন্য কোনো একটি নদী বা জলাশয় নেই, যেখানে কেউ গোসল করতে পারে। এটাও এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন।
‘ঢাকার চারপাশে এসব নদীতে ঝিনুক নেই, মাছ নেই, নেই কোনো মাছরাঙা পাখি বা চিল। এখন নদীতে পাওয়া যাচ্ছে সাকার ফিশ। এসব নদীতে সাকার ফিশ বাঁচতে পারে, কারণ তারা পানি থেকে অক্সিজেন নেয় না। জলের ওপরে সাকার ফিশ ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় বাঁচতে পারে। এ থেকে নদীগুলোর অবস্থা কী দাঁড়িয়েছে তা সহজেই বোঝা যায়।’
পরিবেশ দূষণের কারণেই মানুষ ডায়রিয়া-কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছে। দূষিত এসব পানি এখন কলেরার উৎস বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপনের আগেই আমরা নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করব। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। অনেকেই এটাকে অসম্ভব বলে উল্লেখ করেছেন। তবে আমি বলব, ৯ মাসে যদি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা যায়, তাহলে এই ৯ মাসে আমরা কেন নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করতে পারব না?’
নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান পরিবেশ ধ্বংসে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের পদ থেকে অপসারণসহ প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) ১০ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এইচআরপিবি প্রেসিডেন্ট আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এখলাছ উদ্দিন ভূইয়া।